Wednesday, September 30, 2020

ঝিঁঝিঁ পোকার বাগানবাড়ি

 

বাবলু ভঞ্জে চৌধুরী

-----------------------

 জোছনাজাাগা নিঝুম বাগান

ঝিঁঝিঁ পোকার বাগানবাড়ি

ঘুমঘুম জোনাক পুকুর

ঘুমের ধুমে পাতার তাড়ি

মাঝ রাতের কুহক কোথায়

ব্যথার গান ঢালে

টুপ টুপ শিশির ঝরে

লুকিয়ে পাতার গালে।

(৩০/০৯/২০২০; সাতক্ষীরা)





Wednesday, September 23, 2020

সুমেরু যাত্রা

 বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

--------------------------

ওরে ভাই ও কেরু

যাচ্ছ নাকি সুমেরু?

তা বেশ, যাও যাও

বরফ পাবে ফাও,

সঙ্গে নিও চিনি দধি

আইসক্রিম করো যদি

কিন্তু ভাই দেখো

একটুখানি রেখো

সব খেয়ো না চেটেপুটে

এদিক যেমন নিছ লুটে।

(২৩/০৯/২০২০; সাতক্ষীরা)


Tuesday, September 22, 2020

আব্দার

 

বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

-------------------

এই গাঁয়ে আছে এক হুঁকোমুখো বুড়ো

চুলগুলো উল্লুক খায় ভাত কুড়ো

রাতদিন চেয়ে দেখে খইগাছের চুড়ো

চেয়ে চেয়ে হুট করে বলে আমায় উড়ো।

হাড়সার হাত দুটো মেলে দিয়ে শূন্যে

ঘুরপাক খায় শুধু উড়িবার জন্যে

কঞ্চির পা দুটোয় জোরে মেরে ধাক্কা

বলে নাকি উঠে গেছে চার হাত পাক্কা

তারপর উল্টিয়ে পড়ে গিয়ে পুকুরে

খ্যাক করে কেঁদে বলে খাবে তোরে কুকুরে।

(২২/০৯/২০২০)

Thursday, September 17, 2020

শরত

 - বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

-----------------------

তুলোর পাহাড় নীলের গায়ে রাজ- মেজাজে ভাই


আমার একটা পাহাড় ছিল আরেকটা যে চাই


সাত সকালের রোদ বোলাল ওই পাহাড়ে হাত


আমার কিছু রৌদ্র ছিল আর কিছু চাই সাথ।


আরে আরে আরে


পাহাড় দেখি নারে


রোদ লুকলো বৃষ্টি এল নিয়ে গেল তারে।

(15/09/2020)

Thursday, September 10, 2020

ছায়া

 এই ছায়া এই বন

দেখি খুলে মন,

ছায়া আসে দেখা দিতে

দেখা দিয়ে যায় চলে

ভিজে আসে ভেজাতে

ভিজিয়ে যায় চলে।

আমি কী হে ভাই

আমিও তো যাই,

এসেছি আমি হয়ে

আমারে দেখাই,

যার আমি যার সে

তাহাতে মিলাই।

(১১/০৯/২০২০)


Saturday, September 5, 2020

এ পা আমার গতির অভিশাপ

-বাবলু ভঞ্জ চৌধুরী

আমি একটি শামুক মেরেছি কাল
পথ চলতে অজান্তে, অকারণ সার,
আমি একটি শামুক মেরেছি কাল
বড়জোর একশ গ্রাম ওজন হবে তার।
এখন দেখছি তার
অযুত কেজি ভার।
চেপে আছে ঘাড়ের পরে সেই ভার
জানি মরণের নয়, হত্যার।

আমি একটি শামুক মেরেছি কাল
আরও কটা দিন পৃথিবী বইত যার ভার,
আমি নিয়েছি সেই ভার, তাই এত ভার
কাল যে ছিল পৃথিবীর আজ হল আমার।

পথ ছিল মাঝে, ঝোপ দুধারে
চাঁদ ওঠেনি, উঠবে পরে,
সেই অন্ধকারে
লতাপাতা মাটির মধু ঘাসের গান
বুনোফুল সন্ধ্যার রসে সঙ্গম ঘ্রাণ
সেসব বুঝি শামুকের টান,
তাই লেগেছিল দুটি শামুকের অঙ্গে
রাস্তাপারে চলছিল তাই সঙ্গ পেতে সঙ্গে।

ঠিক সেই সময়, সেই দুঃসময়
পাদুটি আমার নিজের গতিতে হল অন্ধ
অন্যের গতিরে করল বন্ধ।

ভাবি এমন করে রাক্ষস পা আমার
কত অন্যের গতি করেছে বন্ধ
কত অন্যের পৃথিবী করেছে চুরমার
হিসেব নেই তার,
হিসেব দিতে হবে, এ পা নিয়ে পাব না মাফ
এ পা আমার গতির অভিশাপ।

(০৫/০৯/২০২০; দক্ষিনশ্রীপুর)

Thursday, July 30, 2020

মেঘের দেশে

মেঘের দেশে সোনার ঘরে
সোনা রোদ ছড়িয়ে পড়ে,
দূর আকাশে সকাল সাঁঝে
নীল মুক্তোর খিলান মাঝে
দেখি চেয়ে ঘরখানি
খোলা তার দোরখানি,
সেই ঘরেতে আকাশরানী
দুলছে শুয়ে দোলনায়
শরৎ তারে দোল দেয়।।

(৩১/০৭/২০২০)

Friday, July 10, 2020

অর্বাচীন

তুই করলি যারে গোপন
সেই করল উন্মোচন
তোর কালো গায়ের ঘা
তোর বেড়া ভাঙা পা।

তুই করলি যারে বঞ্চিত
সেই করল সঞ্চিত
তোর ক্ষমতার হাহাকার,
লুন্ঠিত তোর ন্যায় বিচার।

অর্বাচীন, কী হীন হেঁয়ালি
ঘৃণাই শুধু বিয়োলি
যার থেকে ভার পেলি
তারে ধুলোয় মেশালি!

(১০/০৭/২০২০; দক্ষিণ শ্রীপুর

Friday, June 26, 2020

গলাগলি


--------
আকাশ খুলে দিল রঙের শিশি এই দুপুরে
কখনও মেঘলা কখনও সাদা,
আষাড় কোন দূঃখের উচ্ছাসে
ঝড়ো চোখে দেখে সূর্যরে।

গাছে আর আকাশে গলাগলি
দেখি, স্মৃতির সাথেও বেঁধে দেয় আমায়
উন্মুখ যারা আমার জন্য
তাদের কথা মনে পড়ে
আর সেই যে-
দুরন্ত বাতাসে দোলা বনানীর মাথায় আকাশ
নিচে ফাঁকা মাঠে দে দোল দোল
বাড়ীতে স্নেহময়ী মা
সব বেদনা এবার খোল, তেমনি স্মৃতি
গলগলিয়ে ওঠে মনে
আষাড়ের এই  আকাশের  রঙের ক্ষণে।

(২৬.০৬.২০২০; সাতক্ষীরা।)

Thursday, April 30, 2020

তারাপ্পা

তারাপ্পা তারাপ্পা তারাপ্পা রে
হরপ্পা যাবি যদি চুল বেঁধে দে
তেল নে নুন নে জল নে না হাতে
দুটো আলু ছেড়ে দে না সেদ্ধ চালের ভাতে।

তারাপ্পা তারাপ্পা তারাপ্পা রে
বুড়ো যদি তাকায় এবার চোখ গেলে দে।

০১/০৫/২০২০; সাতক্ষীরা)

Thursday, April 16, 2020

যাত্রাপথে

বৈশাখের দুপুর। গলগল করে ঝরে পড়ছে সাদা সাদা রোদ্দুর। কালীগঞ্জ -সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে কাশেমের মোটরসাইকেল। দক্ষিণে-বাতাস হুড়মুড়িয়ে আছড়ে পড়ছে চোখে-মুখে। রাস্তার পাশের সুউচ্চ গভীর প্রশান্ত বৃক্ষ শাখায় চোখ রাখতে রাখতে মনে হল, আমার মাথার মধ্যেও খানিকটা আকাশ ঢুকে পড়ছে। এতক্ষণ মাথাটা খুব জ্যাম ছিল।

বাড়ি যখন পৌঁছব, স্নানের বেলা হবে। রোদ্দুর হাত বুলিয়ে থাকবে উঠোন-বাগান-পুকুরের গায়ে। গামছা হাতে সিঁড়িতে এসে দাঁড়াবে কেউ। কল তলায় পেতে দেবে বালতি। উটের ঘাড়ের মত তার পাশের কাঁঠাল গাছটায় রাখবে লুঙ্গি। পুকুরের জল কম, শ্যাওলা ছেয়ে রেখেছে;  এসলাম গাজী তবু সেই কম জলে স্নান করবে ওই পারে। গামছা নিংড়িয়ে পিঠ মুছবে। স্নান সেরে খেয়ে ঘুমোতে যাব সবেদা তলার ঘরে। মাটির ঘর, অগাথ ঠান্ডা। সবেদা গাছের প্রকান্ড ডাল ছেয়ে রাখবে ঘরটিকে। দক্ষিণের জানালা খুলে সবেদা গাছের এইবড় গুঁড়ি দেখব। পশ্চিমের জানালা খুলে দেখব ঝোপ-বাগান। সেখান থেকে সুপুরিগাছ মাথা দোলাবে, কাগজি লেবুর ঝোপ পিটপিট করে তাকাবে। দেউয়ের মত বড় কয়েতবেল গাছটা দেখা যাবে না, শুধু তার ডালে বাসা-বাঁধা সেই টুনটুনি পাখিটির গান ভেসে আসবে। খাটের ওপর শুয়ে শুয়ে আমি শুনব, আর ঘরের ছায়ার মধ্যে দেখব, পাথরের সেই থালাটি দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা। তার পাশে সেই কালো বাটিটি গুছিয়ে রেখেছে ভবিন্দরের মা। সত্য ঠাকুর আবার আসবে, ওই থালা-বাটিতে দুধ কলা দিয়ে মনসা পুজা করবে একদিন। বিকেল গড়ালেই ফুরফুরিয়ে বাতাস ঢুকবে ঘরে। মাটির ঘরখানি আরও ঠান্ডা হয়ে উঠবে। উঠোনে কার কথা শুনে বুঝব-অন্তা কেরানি এসে গেছে। লম্বা-ফর্সা-ছিপছিপে বুড়ো পায়ের ওপর পা তুলে দূর্গা পুজোর আগাম পরিকল্পনা করবে। সন্ধ্যে হয়ে গেলে বড় গোল চাঁদ উঠবে নারকেল গাছের মাথায়। নারকেল চুরির তোড়জোর চলবে তখন ওই-ঠাম্মার বাগানে।

বাড়ি পৌঁছলাম। পাকা খটখটে একটা ঘর। আমার ঢুকতেই ইচ্ছে হল না।

(16.04.2020)

Monday, April 13, 2020

চোখ রাখি



আমি চোখ রাখি

চোখ রাখতে রাখতে আমার শরীর
ম্যাচকাঠির বারুদের মত ফুস করে জ্বলেপুড়ে ভষ্ম হয়ে যায়...


আমার চোখ থেকে যায়, আমি চোখ রাখি
যেখানে আমার যাওয়ার কথা ছিল
সেখানে আমি চোখ রাখি

চোখ রাখব, যতদিন পৃথিবী থাকবে।

(১৩.০৪.২০২০; দক্ষিণশ্রীপুর)

Friday, March 27, 2020

থামাও এবার লাশের গাড়ি

লাশের গাড়ি চলছে হেঁকে
কে যাবি আয়, আয়রে আয়
জীবন-নদীর কুল ভেঙেছে
মরণ তোড়ে তাইতে ধায়।
দিকে দিকে মরছে মানুষ
বয়স বারণ শুনছে না
ভাইরাসের এই নেকড়ে-সময়
আর কী আছে বলছে না।
তবু দেখি চৈত্র বেলায়
শুভ্র আলো ছুঁড়ছে আকাশ
তবু দেখি দখিন হাওয়ায়
ছুটছে রঙিন ফুলের সুবাস।
হে প্রভু দেখতে দাও
তোমার আকাশ তোমার বাতাস
সূর্য-চলা শুন্য পরে
ধন্য তোমার কীর্তি-আভাস।
তোমার হাত পাব বলে
হাত যে বাড়াই সকাতরে
হাত যে তোমার যায় যে ডেকে
তাই জেনেছি প্রথম ভোরে।
থামাও এবার থামাও  প্রভু
থামাও এবার লাশের গাড়ি
ত্রাসের জীবে জাগাও সাহস
ভাগাও মরণ জাগাও নাড়ি।

(২৭.০৩.২০২০; দক্ষিণশ্রীপুর)

Monday, January 13, 2020

ঝড় এনে দাও


আমাকে দুদন্ড ছিনিয়ে নিয়ে ব্রিজের ওপর যখন দাঁড় করালে
তখন তোমার চেহারাটা কেমন ছিল?
তোমার চেহারাটা ছিল এমন―
যেন কেউ নিরীহ একটা বিড়ালকে জোর করে জলের মধ্যে চুবিয়ে রেখেছে।

ঠান্ডার মধ্যে উত্তরের ঠান্ডা হাওয়া ছিল,
আকাশে চাঁদ উঠব উঠব করছিল
শহরের ব্যস্ত মানুষেরা আমাদেরকে দেখছিল
কেউ ভাবছিল―তুমি আমি প্রেমিক-প্রেমিকা
কেউ ভাবছিল–অন্যকিছু
কেউ ভান ধরে তোমার কথা শোনার চেষ্টা করছিল
শুধু আমিই তোমার অমন চেহারা দেখছিলাম।

তুমি চি চি করে বলে যাচ্ছিলে–
তোমার বিয়ের ঠিক হয়েছিল
আমার জন্য সে সুযোগ হাত-ছাড়া হয়েছে,
আমি শুনছিলাম, আর এখন দেখছি–
আমার হৃদয়-গৃহে যে তুমি ছিলে রানীর মত
আমার বক্ষতলে যে তুমি ছিলে সতেজ লতার মত,
অশুভ এক বাণ তোমার চেহারাটাকে ক্ষত-বিক্ষত করছে
আমার ভেতরে
আমি দেখছি
চার দেওয়াল হয়ে আমি শুধু দেখছি
আমার হৃদয়-গৃহে তোমার সুললিত চেহারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
আমি তোমাকে রক্ষা করতে পারছি না
তোমার প্রাণ-বায়ু শেষ হতে চলেছে
আমি শুধু মূঢ় দেওয়াল হয়ে তোমাকে আটকে রেখেছি
ভেঙে লুটিয়ে পড়ার শক্তিও আমার নেই
ঝড় এনে দাও ঝড়
আমি ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় রয়েছি
ঝড় এনে দাও
মুক্ত হও, আমায় মুক্ত করো।

(১৩/০১/২০২০; সাতক্ষীরা)