Thursday, April 16, 2020

যাত্রাপথে

বৈশাখের দুপুর। গলগল করে ঝরে পড়ছে সাদা সাদা রোদ্দুর। কালীগঞ্জ -সাতক্ষীরা মহাসড়ক ধরে আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে কাশেমের মোটরসাইকেল। দক্ষিণে-বাতাস হুড়মুড়িয়ে আছড়ে পড়ছে চোখে-মুখে। রাস্তার পাশের সুউচ্চ গভীর প্রশান্ত বৃক্ষ শাখায় চোখ রাখতে রাখতে মনে হল, আমার মাথার মধ্যেও খানিকটা আকাশ ঢুকে পড়ছে। এতক্ষণ মাথাটা খুব জ্যাম ছিল।

বাড়ি যখন পৌঁছব, স্নানের বেলা হবে। রোদ্দুর হাত বুলিয়ে থাকবে উঠোন-বাগান-পুকুরের গায়ে। গামছা হাতে সিঁড়িতে এসে দাঁড়াবে কেউ। কল তলায় পেতে দেবে বালতি। উটের ঘাড়ের মত তার পাশের কাঁঠাল গাছটায় রাখবে লুঙ্গি। পুকুরের জল কম, শ্যাওলা ছেয়ে রেখেছে;  এসলাম গাজী তবু সেই কম জলে স্নান করবে ওই পারে। গামছা নিংড়িয়ে পিঠ মুছবে। স্নান সেরে খেয়ে ঘুমোতে যাব সবেদা তলার ঘরে। মাটির ঘর, অগাথ ঠান্ডা। সবেদা গাছের প্রকান্ড ডাল ছেয়ে রাখবে ঘরটিকে। দক্ষিণের জানালা খুলে সবেদা গাছের এইবড় গুঁড়ি দেখব। পশ্চিমের জানালা খুলে দেখব ঝোপ-বাগান। সেখান থেকে সুপুরিগাছ মাথা দোলাবে, কাগজি লেবুর ঝোপ পিটপিট করে তাকাবে। দেউয়ের মত বড় কয়েতবেল গাছটা দেখা যাবে না, শুধু তার ডালে বাসা-বাঁধা সেই টুনটুনি পাখিটির গান ভেসে আসবে। খাটের ওপর শুয়ে শুয়ে আমি শুনব, আর ঘরের ছায়ার মধ্যে দেখব, পাথরের সেই থালাটি দেয়ালে হেলান দিয়ে রাখা। তার পাশে সেই কালো বাটিটি গুছিয়ে রেখেছে ভবিন্দরের মা। সত্য ঠাকুর আবার আসবে, ওই থালা-বাটিতে দুধ কলা দিয়ে মনসা পুজা করবে একদিন। বিকেল গড়ালেই ফুরফুরিয়ে বাতাস ঢুকবে ঘরে। মাটির ঘরখানি আরও ঠান্ডা হয়ে উঠবে। উঠোনে কার কথা শুনে বুঝব-অন্তা কেরানি এসে গেছে। লম্বা-ফর্সা-ছিপছিপে বুড়ো পায়ের ওপর পা তুলে দূর্গা পুজোর আগাম পরিকল্পনা করবে। সন্ধ্যে হয়ে গেলে বড় গোল চাঁদ উঠবে নারকেল গাছের মাথায়। নারকেল চুরির তোড়জোর চলবে তখন ওই-ঠাম্মার বাগানে।

বাড়ি পৌঁছলাম। পাকা খটখটে একটা ঘর। আমার ঢুকতেই ইচ্ছে হল না।

(16.04.2020)

No comments:

Post a Comment