১.
এতবড় মিথ্যের মধ্যে
যা দেখেছি,যে ভালোবাসা পেয়েছি―তা-ই সত্য
আজ এ সত্যই তাড়িয়ে দিল সব মিথ্যাকে
সব না-কে। (০২.০৫.১৮)
২.
যাবার আগে
মন বলল, বেরিয়ে যা!
(০২.০৫.১৮)
৩.
মনের বেড়া দুর্বল হতে সময় লাগে না।
তা এই কংক্রিট, তো এই ধুলোবালি।
উদ্যমী চিন্তার বুনন দিয়ে তাকে রক্ষা করতে হয়।
(২৭.০৭.১৮)
৪
যদি বলো হ্যাঁ, তবে হ্যাঁ
যদি বলো না, তবে না
এ পৃথিবী এমনি, তবে তোমার আছে―
ধাঁধা ভাঙার ধাঁধা।। (২৭.০৭.২০১৮)
৫. ভালো সংবাদ হচ্ছে কর্মস্পৃহার টনিক (২৭.০৭.২০১৮)।
৬. মনে ভয় ঢুকালে ভয়ই আসে
আর বিধাতা নীরবে হাসে।
(২৭.০৭.২০১৮)
৭. (২৮.০৭.১৮)
# সঠিক সুর তুলতে শুধু বাদ্যকর্তা নয়, তারেরও সামর্থ দরকার হয়।
# চা এমন একটা জিনিস, কেউ সাধলে না বলা কঠিন।
৮. (২৯.০৭.২০১৮)
# বতলবন্দি জল সমুদ্রে ভাসে, কিন্তু মিশতে পারে না। (ধর্মান্ধ মৌলবাদীদের সম্পর্কে)
৯. (৩১.০৭.২০১৮)
গ্রামের পথে পথে
বর্ষা তুমি দখল নিলে
নিঝুম রাতে।
যখন সবাই রয় ঘুমে
দর্প পায়ে নেমে আসো
দাও ভূমি চুমে।
রাতের গহীন আধাঁর
থেকে থেকে হল্লা করে
উল্লাসে তোমার।
তোমার ঝুপটুপ ঝুপ টুপ
কানের পাশে বাজে শুধু
আর সকলেই চুপ।
১০. (০৪.০৮.১৮)
বৃষ্টি বিভোর রাতে আঁধারের বদ্ধ বুকে
রিমঝিম রিমঝিম সুর তুলে
কে আসে, ওই আসে।
১১. (০৮.০৮.১৮)
এই পৃথিবীতে আমার সাথে সংশ্লিষ্ট অনেক পরিস্থিতি হ্যান্ডল করার ক্ষমতা আমার নেই। কিন্তু আমার একটা ক্ষমতা আছে―তা নিজস্ব জগৎ সৃষ্টি করার। কিছু ছেড়ে, কিছু নিয়ে তা করা যায়। আমি জানি সে জগৎ আমাকে কখনো নিঃসঙ্গ করবে না, কখনো অবহেলা করবে না।
১২. (১০.০৮.২০১৮)
আমি পারি পারি করে করি না কিছু
আমার দিন যায়,
আমি যাই তারই পিছু পিছু।
আমার স্বপ্নগুলো চোখের কাছে ওড়ে
আমি ধরি ধরি ধরি করে
ধরি না তারে।
১৩. (১৩.০৮.২০১৮)
প্রিয়জনদের মধ্যে আছি, আমার কাছে এরূপ সময়টাই সবচেয়ে মূল্যবান। কেননা পৃথিবীর যে রূপ আমি দেখছি―তা এদের মতোই। আর যে রূপ আমি দেখিনি―তা দেখতেও এরা শক্তি যোগায়।
রবীন্দ্রসংগীত আমার অন্ধকারে হঠাৎ বজ্রআলোয় কাকে যেন দেখিয়ে দেয়, যাকে দেখার ভুলে যাওয়া ব্রত নিয়ে ঘুরে ঘুরে মরি আমি সংসারের জালে। আর তাকে দেখেই কিছু বুঝে কিছু না বুঝে ডুকরে কেঁদে উঠি আমি। একটু আগে “চরণ ধরিতে দিও গো আমারে “ গানটি শুনছিলাম হেমন্তের কণ্ঠে। যখন “স্খলিত শিথিল কামনার ভার/বহিয়া বহিয়া ফিরি কত আর” কলিটি হলো, তখনই কী এক উপলব্ধিতে হাউমাউ করে কান্নার বাঁধ ছুটে গেল আমার। আমি অনেকদিন এমনকরে কাঁদিনি।
১৪. (১৬.০৮.২০১৮)
আটপৌরে কথা দিয়ে ভাষা-রমনীকে রাণীর মতো সাজানো যায় না ঠিক, তবে তাতে যে সাধারণ ও স্বাভাবিক সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তা তাকে বিপুল জনপ্রিয়তা দিতে পারে।
#
রক্তচোষা হয়ে থাকলি রে মন
যার রক্তদানে চলেছিল তোর শরীর
তারেই করলি নিধন!
তোর দুষ্ট দুর্বলতা
তোর নষ্ট স্বাধীনতা
#
কথাময় ভুবন
ভাষা তারই ধরতে হবে
আমার নিজ ভাষায়।
১৭.০৮.২০১৮
#
যখন বাইরে বলতে পারিনা, তখন ভেতরে বলি, সেটাই একদিক থেকে ফুঁড়ে বাইরে এসে দাঁড়াবে।
২০.০৮.২০১৮
#
ভেতরে কান্না ঝরে, বাইরে হাসি
আমি যে পরবাসী।
# কিছু কিছু কথা আছে যা বোমার চেয়ে ধ্বংসাত্মক। বোমায় মানুষ মেরে ফেলে,আর কথায় মৃত্যুযন্ত্রণা দিয়ে যায়।
২৬.০৮.২০১৮
# আমি বন্দিত্বের দেওয়াল ভেঙে দেখি আবার বন্দি হয়েছি।
২৭.০৮.২০১৮
#
কাজের দিনে বৃষ্টি তুই এলি রে
তোরে দেখব কেমন করে
তোর গভীরভাবে পড়া
তুই যে স্বর্গ ছোঁয়া
তোরে ছোঁব কেমন করে।
#
যে হর্ষ আগামীর সরসতা কেড়ে নেয় তাকে মূঢ় বেদনা হিসেবেই বিবেচনা করা উচিত।
#
বাঁচার অধিকার হরণ করে বাঁচা যায় না।
#
পৃথিবীর ইতিহাস বলে অহেতুক মানুষ মেরে বাঁচা যায় না।
২৮.০৮.২০১৮
# আমার কোনো কথা
তোমার চলতি পথে
কোনো দৃশ্যে,চিত্রে অনুসঙ্গে
যদি ভেসে ওঠে মনে
মনে রেখ আমিও আছি তোমার সঙ্গে।
৩১.০৮.২০১৮
#
জীবনের ছোট দুঃখের মধ্যে বড় দুঃখের বৈশিষ্ট বিদ্যমান থাকে।
#
মনের বড় শক্তি হচ্ছে তার উৎসাহী উত্তর খোঁজার শক্তি।
০২.০৯.২০১৮
#
যা মানুষকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়, তা ভাষা। সেই ভাষার যে লেখ্যরূপ তাই তার বোধ্য শব্দ, অভিধানে থাকুক আর না থাকুক। রবীন্দ্রনাথ ভাষাকে আরো ব্যাপক ও বোধ্য করার জন্য যে শব্দগুলো তৈরি করেছিলেন-তার সর্বব্যবহার হওয়া উচিত, নইলে বাংলা ভাষা গতি পাবে না।
০৫.০৯.২০১৮
# হুমায়ুন আযাদ ইন্দ্রিয় সমূহ গোছের কোনো নামের এক লেখায় যা বলেছেন তার কিছু সার কথা মোটামুটি এরকম : আমি জন্মের আগে কিছুই ছিলাম না, মৃত্যুতেও কিছু হয়েও থাকব না, জন্মিয়ে আমি বুঝেছি জন্ম কেমন, মৃত্যু কেমন, অনুভূতি কেমন। জন্মের আগে আধার আর মৃত্যুর পরও আবার সেই আধার। এর মধ্যে কোনো এক আলোর ঝিলিক হিসেবে আমার জীবন পেয়েছি। মৃত্যুর পর আমি আর কিছুই বলতে পারব না, আমি যে জন্মেছিলাম-তাও মনে হবে না,আমি বলে যে কেউ ছিল তাও জানব না, এখনকার মতো কোনো দুঃখ থাকবে না আমার, থাকবে না কোনো আক্ষেপ।
তিনি আরো অনেক কথার সাথে রবীন্দ্রনাথের ‘সত্য’কে নিয়েও কথা বলেছেন। অন্যান্য ধার্মিকদের মতো রবীন্দ্রনাথও জগৎকে রহস্যিকরন করেছেন। এ কাজে তিনি ‘সত্য’ শব্দটা বেশি ব্যবহার করেছেন।
আমি যেটা বুঝেছি, তার লেখায় কোনো বিজ্ঞান নেই। মানুষ যে জেনিটিকভাবে শরীরে প্রবাহমান তা তিনি অনুভব করেন নি। তিনি যার কথা বলছেন তা তার ‘আমি,’ যে ‘আমি’কিছু ভোগ করে, এবং বিবিধ ভোগ অনুভব ও উপলব্ধির আলোতে একত্র হয়ে উঠে একটি “আমি”র সত্ত্বা তৈরী করে। সে সত্ত্বার ‘আমি’ ভোগের, তা শুধু ভোগ চায়, তা পুঁজি গড়ার, পুঁজিবাদের,স্বার্থ গড়ার, চোখবুজে বৈষয়িক উন্নতি গড়ার। আমার মৃত্যুতে আর কিছুই নেই- মানে আমার জীবনটাকে যেভাবে পারো তেমন করে উপলব্ধি করো। তার সত্য এ্টাই । এ কারণে সে “আমি” মানুষের দিকে না তাকানোর। অন্যান্য কিছুর প্রতি না তাকানোর। তিনি যদি ধর্মের বাড়াবাড়ি ও অন্ধ-বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কিছু বলতে গিয়ে এ সব বলে থাকেন - তবে তা আরো ভয়ানকভাবে বলেছেন। তিনি তার সাধারণ অনুধাবন দিয়ে কথা বলেছেন, যা মোটাদাগে একজন সাধারণ মানুষ উপলব্ধি করে।
তার কথার বিরুদ্ধে বলতে গেলে আমি এভাবে বলব :
এক বুড়ো লোক খুঁক খুঁক করে কাশছেন। জীবনে তার আর ভোগের কিছু নেই। শরীর খারাপ। কোনো কিছু ভালো লাগছে না। শুধু না ভালোলাগাটাই তার ভালো। তিনি দেখলেন তার সামনে দিয়ে একটি বিড়াল চলে যাচ্ছে। এ বিড়ালের কোনো স্বতন্ত্র পরিচয় নেই। তিনি তার ক্লাস ফোরে পড়া পোতাকে ডেকে বলছেন, দেখ আমার বাবার বাবার বাবার বাবাও বিড়াল দেখেছে, আমিও দেখছি, তোর বাবাও দেখছে, তুইও দেখছিস, যদি বিড়াল জাতি বেঁচে থাকে তবে তোর ছেলে, তার ছেলে, তার ছেলেও বিড়াল দেখবে। তেমনি আমিও - আমি মানুষও তেমনি। বিড়ালের বাবার বাবার বাবাও মানুষ দেখেছে, এ বিড়ালটিও আমাকে মানে মানুষকে দেখছে, তেমনি এর থেকে জন্মানো অন্যান্য বিড়ালও মানুষকে দেখবে।
এখন যদি বিড়াল মনে করে তার আদি পিতাকে মনে রাখবে।এখানে স্মরনের ব্যাপার আছে। স্মরণে না থাকলেও কোনো দোষ নেই। কারণ তাদের জিন পরবর্তী বিড়ালেরা বহন করছে। এখনকার বিড়ালের মতো সেই বিড়ালেরও একই সুখ, একই দুঃখ, একই আঘাত, একই সংগ্রাম, একই কষ্ট, একই বেদনা, একই জন্ম, একই মৃত্যু।সেই আদি বিড়াল যা বহন করত , এখনকার বিড়ালরাও তাই বহন করে। যদি বিড়াল জাতি বেঁচে থাকে তবে তারা স্মরণে থাকতে পারে (যদি বিড়ালের স্মরণশক্তি থাকে কিংবা সেই আদি বিড়াল স্মরণে রাখার মতো যদি কিছু করে) বা বহন করবে। মনে রাখতে আমরাও বিড়ালের মতো একটি প্রজাতি, একটি জীব। আমরা বুদ্ধির বলে পৃথিবীটাকে আমাদের ভোগের বানিয়েছি। বলেছি- এই জমি আমার , এই সাগরের এতটা আমার, এই পাহাড়ের এতটা আমার। কিন্তু এই পৃথিবীতে সকল প্রাণির ভাগ আছে। আজ যদি মানুষের চেয়ে শক্তিশালি বা মানুষের চেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত কোনো প্রাণি থাকত তবে তারাও আমাদেরকে বঞ্চিত করে (আজ যেমন আমরা অন্যান্য প্রানীদের করছি) দখল নিত।
হুমায়ুন আযাদের ‘আমি’ মরে গেলেও মানুষের মধ্যে একই অনুভুতিতে সে থেকে যাবে, যতদিন মানব প্রজাতি বেচে থাকবে। হুমায়ুন যেভাবে সুখ, কাঁপুনি, কামনা, ভালোবাসা অনুভব করতেন, তার পরের মানুষেরাও তা-ই অনুভব করে। যে ‘আমি’র মৃত্যু হয় সে কিছুই বুঝতে পারেনা ঠিকই, তার কোনো কষ্ট, দুঃখ থাকেনা ঠিকই, কিন্তু জীবিতের সকল অনুভব, ভোগ ও উপলব্ধিতে যে ‘আমি’র সেই একই ভবে একই ‘আমি’। কাজেই প্রাণ হচ্ছে প্রবাহমান নদীর মতো, তার আপাত কোনো মৃত্যু নেই। যে প্রাণ আমি পেয়েছি, তা আমি নিজে নিয়ে আসিনি, হতে পারে তা কোনো স্বয়ংসিদ্ধ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় হয়েছে। হোক, যে প্রক্রিয়ায়ই হোক না কেন- তাকে আশির্বাদ হিসেবে তাকে মহান হিসেবে বললে ক্ষতি কী? অােমি তো আমি হয়েছি সেই প্রাণের কল্যাণেই।আমি যদি সেই প্রাণকে প্রার্থনা করি, হতে পারে তাতে কিছু হবে না, হতে পারে তার কোন ভিত্তি নেই, কিন্তু তাতে যে আমি মনোগত শক্তি বা মনোগত দুর্বলতা পার হওয়ার পথ পাই তাতে তো আমার লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।সে তো আমাকে শক্তি যোগায়। দেখানোর শক্তি যোগায়। বাঁচার শক্তি যোগায়। জগত খুড়ে অন্যান্য কিছু বের করে আনার শক্তি যোগায়। আমি সেই প্রাণ এবং প্রাণ সৃষ্টির জন্য যে প্রকৃতি তাকেই আমার শক্তি ও আরাধ্য হিসেবে বিবেচনা করি। রবীন্দ্রনাথ তা-ই করতেন।
কোনো চাপানো বিশ্বাসকে মেনে নিতে নেই। তাহলে পৃথিবী চলে না। পৃথিবী স্থবির হয়। এটাও ঠিক যে কোনো বিশ্বাস একরকম থেকে যাYY6য় না। তা পরিবর্তন হয়। হয়তো হাজার বছর লাগে, কিন্তু তার কিছু না কিছু পরিবর্তন বা বিবর্তন হয়েই থাকে। রবীন্দ্রনাথ কিছু বিশ্বাস করতেন, তা উপনিষদ থেকে। কিন্তু চারপাশ দিয়ে দেখেছেন, তাই তার ভাবনার সাথে মিলে যাচ্ছে। তিনি সমস্ত প্রকৃতিকে একটি সত্ত্বা বলে বিবেচনা করেছেন। এটা তো বৈজ্ঞানিক সত্য যে, প্রকৃতি জীবনধারণের উপসর্গ দিয়েছে বলে আমরা বেঁচে আছি। এবং অনুরুপ প্রাকৃতিক আনুকুল্য থাকলে আরো অনেক গ্রহে প্রাণ থাকবে, যা আমরা খুঁজছি।
রবীন্দ্রনাথ মনে প্রাকৃতিক এই সদয়তাকে পরমসত্ত্বা হিসেবে মনে করেছেন। তিনি এখানেই ক্ষান্ত থাকেন নি। তিনি এর একটি কারণ দেখতে চেয়েছেন, তা হলো প্রকাশ। মুঢ় কথাহিন প্রকৃতি নিজেকে প্রকাশ করতে চেয়েছে। মানুষসহ সারা প্রাণিজগত ও জড় জগত সেই প্রকাশে কাজ করে চলেছে। মানুষ সুখ-দুঃখে, ভোগে-আনন্দে, ত্যাগে, জন্মে-মৃত্যুতে সেই প্রকাশ করে যাচ্ছে। প্রকাশ করাই আনন্দ।সে দুঃখও হতে পারে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন , বিচিত্রের মধ্যে যেতে যেতে একটি অখন্ড সুতোর মতো একটি সত্ত্বাই দেখা যায়। সে নিশ্চয়ই মহাপ্রাণ। তার অন্তর স্রোত একই। সময়ের এই “আমি’’ সেই অন্তরস্থ অখন্ড স্রোতের ওপর বুদবুদের মতো উঠে আবার মিলিয়ে যায়, আবার তা বুদবুদ আকারে হয়। আমরা চিন্তা করলে তা-ই দেখি।
রবীন্দ্রনাথ তো কোন আলাদা স্বর্গ বা নরকের কথা বলেন নি। মানুষ মরে গিয়ে সেই জগতে থাকবে- তাও তিনি বলেন নি। তিনি সেই মহাপ্রাণের নিরিখে যা কর্ম তাকেই সত্য বলেছেন, তিনি কেনো রহস্যীকরণ করেন নি। না বোঝা যদি রহস্য হয়, তবে হুমায়ুন আযাদ যা বুঝেছেন তাতেও রহস্যীকরণ রয়েছে। তিনি বলেছেন, একমাত্র মৃত্যুই এই রহস্য নিবৃত্ত করতে পারে। অর্ধাৎ মাথা যন্ত্রণা হচ্ছে তো মাথাটা কেটে দাও এর মতো। মানুষ অতো সহজে পরাজয় মেনে নিতে পারে না। তাকে দেবতার বিরুদ্ধে, নিজের বিরুদ্ধে, ঈম্বরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এতদূর আসতে হয়েছে। হুমায়ুন আযাদ কোনো সাধারণ দর্শনও দিতে পারেন নি, যা মানুষকে স্বস্তি দিতে পারে।
প্রকৃতি চিরদিন এমন থাকবে না। তা তেল ফুরানোর মতো বৈরী হবে। সে বৈরী অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষের যা করণীয় তা তো জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা দিয়ে তৈরী করতে হবে। এই যে মাহাকাশে প্রাণ খোঁজা, এই যে সূর্যের কাছে যাওয়া, সুর্যের শক্তিকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা, এই যে, চিকিৎসায় উন্নতিসাধনের চেষ্টা সবই তো সেই মানুষকে বঁচানোর জন্য। হুমায়নের মতো যদি কেউ ভাবত, আমি তো মরে গেলে সব শেষ,কী হবে এতকিছু করে? তবে কী ভালো হতো? মানুষ জানে যে, মানুষের মধ্যেই মানুষ বেচেঁ থাকবে। তাই মানুষের যাত্রাকে যতদূর প্রবাহমান রাখা যায় , যদি সে সেই যাত্রায় সামান্য কিছু অবদান রাখে তবে তার সেই “অমি” কে মানুষ তার কল্যানের জন্য মনে রাখবে। এটাই নিয়ম।এই চিরসত্যতে অনেক ধর্মই এখন আশ্রয় করেছে, এ ধারণায় অনেক ধর্ম বিবর্তিত হচ্ছে। অলীক বিশ্বাসের উপর বেশিদিন নির্ভর করা যায় না। কারণ মানুষের মনে প্রতিনিয়ত প্রশ্ণ উত্থাপিত হচ্ছে। জ্ঞান বিজ্ঞান নতুন নতুন দিক উন্মোচন করছে। এর ফলে মানুষের বিশ্বাসও ধাক্কা খাচ্ছে এবং খাবে। এভাবে ধাক্কা খেতে খেতে একদিন সে সব ধর্মগত বিশ্বাস মানুষের মনে প্রশ্ন তুলবে এবং সেই ধর্মেরও প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যাবে নতুবা বিবর্তন হয়ে টিকে থাকবে বিশেষ মানুষের মনে।
০৮.০৯.২০১৮
# (গান)
তুই এত করিস এত ধরিস
তোরে ধরবে কে
তুই এত হাসাস এত কাঁদাস
তোরে হাসাবে কে।।
তুই জেনে না জেনে থাকবি প্রাণে
দেখে না দেখে বইবো দেহে মনে
আমি চলে যাব তোরে রেখে যাব
তোরে রেখে রেখে আমি রয়ে যাব
তুই ভাবিস না ভাবিস আমি ভাবি
তুই যে আমার ভাবনার চাবি।।
তুই ছাড়া এ জগৎ কী হবে আমার
জগতের কাছে থাক জগতের ভার
তুইময় আমি যে কিছু নই আর।।
#
আমার শরৎবেলা যায় ফুরিয়ে যায়
রোদের মাঝে বৃষ্টিফোটা
লাগবে না আর গায়।
১১.০৯.২০১৮ (ঢাকা)
# ধর্মের দুর্বলতা মানুষকে শক্ত করে ফেলে, সে ভেঙে গেলেও নোয়ে না।
#
মাঝে মাঝে আকাশে রঙের কিছু সুদৃশ্য খেলা দেখা যায়। মেঘে, দিগন্তে সে রঙ বড়োই মনোহর। আলো দিক পাল্টালেই সে রঙ হারিয়ে যায়।
তেমনি চলতি পথে হৃদয় ভোলানো অনেক কিছুই দেখা যায়, যদি তা থেমে একেবারে চোখের সামনে এসে দাঁড়ায়, অথবা চোখ ও মনের কথার সাড়ে চলে আসে, তবে তা ভাবি তার এই থামা আমার জন্য নয়। কোন হওয়ায় সে ভেসে আসে, আবার উড়ে চলে যায়।
দেখি যে, সেই অমল ভালোলাগাটুকুকে বস্তুগতভাবে ভোগের জন্য ইন্দ্রিয়তাড়না পরিতৃপ্ত করতে মানুষ ব্যাকুল। মানুষের এই ব্যাকুলতাকে টার্গেট করে আধুনিক শহুরে ও শহুরে আঁচপড়া সমাজে অর্থ-হাতানো, লোভ-লালসা, প্রবঞ্চনা ও হিংস্রতা দেখা দিচ্ছে। পাশ্চাত্য ও শহুরে জীবন-ভাবনা এটাকে সমর্থন করছে। ইনটারনেট, মোবাইল ও ডিজিটালাইজেশনের ফলে যে ভার্চুয়াল জগত গড়ে উঠছে, অর্থ,ব্যবসা, প্রতিপত্তি, রাজনীতি ও মতাদর্শ চাপানোর জন্যও তা সমর্থন যোগাচ্ছে। ফলে, শহুরে মানুষ, এমনিই নানান জটিলতার মধ্যে, ভীষন আত্মকেন্দ্রিক ভোগবাদী হয়ে উঠছে এবং পরিবার, সন্তান, এমনকি সমাজ থেকেও তারা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ তারা আশানুরূপ দায়িত্ব পালন করতে পারছে না। এক পর্যায়ে তারা হয়ে পড়ছে বিষণ্ন, অবসাদগ্রস্ত।
তবে হ্যাঁ, এক এক জন এক একভাবে ভোগ করতে চায়। কিন্তু কারোর স্পেস আটকে কিংবা সংঘর্ষ ঘটিয়ে কোনো ভোগ না করাই উত্তম।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং কিছু বিবর্ণ মননের প্রভাবে মানুষের পছন্দ পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে। সে পছন্দ এতটাই অবুঝ যে, কোনো কিছুর পরিবর্তে তাকে মন থেকে তাড়াতে পারছে না মানুষ। এই পরিবর্তিত পছন্দের কারনে মানুষের চিরায়ত মিলনসঙ্গীও পরিবর্তন হচ্ছে। অন্যান্য অনুষঙ্গের সাথে সেই পছন্দ মেলার কারণে অনেক তরুণ তরুণীর বিয়েও হচ্ছে না। পছন্দে না পুষলে বিয়েটা হবে কেমন করে? শুনেছিলাম জাপানে নাকি বিয়েযোগ্য পুরুষের তুলনায় মেয়েদের সংখ্যা খুব কম। অনেক ছেলেদের বিয়ে হচ্ছে না। কচিৎ হলেও পছন্দের তারতম্যের কারণে ভেঙে যাচ্ছে। ফলে এই শূন্যতার মধ্যে ঢুকে পড়ছে সমকামিতা।
যৌনাকাঙ্খা মানুষের জৈবিক বৃত্তি। শুনেছি সিলিকন পুতুলের পতিতালয় বানানো হয়েছে জাপানে ও জার্মানিতে, মানুষের সেই জৈবিক বৃত্তিকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে আমাদের? মানুষকে ভারমুক্ত করতে গিয়ে মানুষকে কীভাবে দেখা হচ্ছে তা ভাববার বিষয়।
১২.০৯.২০১৮
# আমার সংস্কৃতি হচ্ছে আমার সামনের আড়াল ও নিজেকে প্রকাশ করার জন্য নিজস্ব সক্ষমতা।
২৭.০৯.২০১৮
#
ভালোবাসা পায়ে লুটায়, আর আমি অন্যজায়গায় মাথা পাতি।
০৫.১০.২০১৮
#
কোনো দায়িত্ববান ব্যক্তি যখন দায়িত্ব পালনে অজ্ঞ হয়, তখন পদ আর চেয়ার বোঝানোর জন্য খুব খবরদারি করে। এতে কাজটির বারোটা বাজে। রাষ্ট্র বা কর্তৃপক্ষের উচিত ওই ব্যক্তিকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা।
# (১২/১০/২০১৮)
বহুদিন পরে বন্ধ দরজায় টোকা দিল সে
একটি লাইকে,
বহুদিন পরে বন্ধ দরজা খুলতে ইচ্ছে করে
মামুলি রিপ্লাইয়ে।
বহুদিন পরে বন্ধ দরজা খুলতে যাই
মাধুরী কমেন্টে,
দেখি দেওয়াল রয়েছে দাঁড়িয়ে দরজা নাই
সামাজিক ফন্টে।
বহুদিন পরে বন্ধ দরজায় টোকা দিল সে
একটি লাইকে,
বহুদিন পরে বন্ধ দরজা খুলতে ইচ্ছে করে
মামুলি রিপ্লাইয়ে।
মাধুরী কমেন্টে বহুদিন পরে বন্ধ দরজা যেই
খুলতে যাই
দেখি দেওয়াল রয়েছে দাঁড়িয়ে দরজাটা নাই।
##
২৭.১০.২০১৮
আমাদের রক্তের ভেতরে যে অন্ধকার সেই আমাদের অন্ধকারে টানে।
##
একটি ভালোলাগা
ঘুরিয়ে মারে অতলান্ত সময়,
একটি ভালোলাগা
বুঝিয়েও না বুঝতে দেয়
ভালোলাগা কারে কয়।।
একটি ভালোলাগা,
অন্ধকারের কাছে
টানে আমাদের,
আমাদের রক্তের মাঝে
অন্ধকার আছে।।
একটি ভালোলাগা
জন্ম দেয় মিথ্যের
সুন্দর মিথ্যে
যেমন শিশু
প্রথম দেখে
পৃথিবীকে।।
##
প্রতিটি প্রেমপত্রই সবচেয়ে সুন্দর মিথ্যে
যেমন শিশু প্রথম দেখে পৃথিবীকে।।
০৫.১১.২০১৮
## এই চেনা জানা সুন্দর জগতের মাঝে আমারও যে একখানি জগৎ আছে, শরীরে যন্ত্রনা না হলে তা বোঝা কঠিন। সবকিছু স্বাভাবিক, শুধু আমার সেই জগৎখানিই অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে আমার মতো। নিজের সেই জগতের লাগাম টেনে রাখাই আমার আসল যুদ্ধ।
## সুস্থ জগতের মাঝে অসুস্থ হলেই সবকিছুতেই বৈপরীত্য লাগে।
#
২২.১১.২০১৮
এই রোদ, এই ছায়া সবই ব্রহ্মাণ্ডের ক্ষরণ
গায়ে মেখে আমরাও ক্ষরিত হচ্ছি ।
#
আমার কাছে গল্প সাঁত করে এসে চলে যায়। সাথে সাথে না ধরতে পারলে অসুবিধা। স্বাভাবিকতা নষ্ট হয়। পালিশ করলে অন্যরকম হয়ে যায়। চাকচিক্যের মধ্যে সুক্ষ ফাঁক থেকে যায়।
(০৯/১২/২০১৮)
# ২৬.১২.২০১৮
সৃজনের জগতটি চেনা দিয়ে বেধে আছে। নতুন কোনো জিনিস দেখলেই অনেকে নাক সিটকোয়। কিন্তু আজ যা নতুন, একদিন তাই চেনা হয়ে যাবে। তখন এই চেনা জিনিসই মানুষ মনে ধরে রাখবে। আমি নতুন নিয়েই লিখে যাব। চেনা জিনিসের মধ্যে অচেনাকে দেখানোই সাহিত্যের অন্যতম কাজ।
# (২৮.১২.২০১৮)
১.যখন নিজের সব ফুরিয়ে যায়, তখন কিছুই ভালোলাগে না। কাজেই ভালো থাকার জন্য নিজেই সব চেয়ে মূল্যবান।
২. নিজের অবস্থান সম্পর্কে হীনমন্যতা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্বক ক্ষতি করে। অবস্থাকে ব্যাখ্যা করে তার সাথে নিজেকে না মানতে পারাই হীনমন্যতার লক্ষণ। মনে রাখতে হবে প্রতিটি মানুষই ইউনিক। প্রতিটি মানুষই আলাদা। প্রত্যেকের কর্ম আছে। আছে এক এক ধরনের স্বাধীনতাবোধ। যেকোনো ভাবে নিজেকে জয়ী হিসেবে ভাবতে হবে। জয়ের অনেক পথ আছে। সবাই তা দেখতে পায় না। আমার কাজ হলো জয়ী হওয়া, সেটা যে পথেই হোক, আমি যেন তা দেখতে পারি, অন্য কেউ না পেলেও ক্ষতি নেই। এভাবে নিজের হীনমন্যতা কাটাতে হবে।
# ০৬.০১.২০১৯
আজ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “ক্ষুধিত পাষাণ” গল্পটি পড়লাম। গল্পটি শুনেছি তাঁর স্বপ্নে দেখা কিছুর কারণে লেখা। লাইনগুলো বড় বড়। সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনার মধ্যে এমন কিছু তিনি তুলে এনেছেন, যাতে মনে হবে–মনের মধ্যে ছিল, কিন্তু জীবনেও খুঁজে পেতাম না। রহস্য ও রোমাঞ্চ এমনভাবে ফুটিয়েছেন যে, কমতি তো মনেই হয়নি, আতিশয্যও ভাবতে পারিনি, কেননা, একের পর এক ঘটনা-ইট সাজিয়ে তিনি বিজ্ঞানসম্মত ভাবেই সুদৃশ্য রহস্য-প্রাসাদ তৈরি করেছেন, পড়ার সময় মনে হয়, “তাই তো এগুলো তো হয়, কেন ভাবিনা আমরা?”
#
(১২.০১.২০১৯)
শেষ দিনে বলতে যেন পারি
তোমার করুণা আমি পেয়েছিলাম।
#
(২৪.০১.২০১৯)
চেয়ার বড় জ্যান্ত জিনিস
মড়াও নড়ে ওঠে
গাঁধা ভাবে সে-ই ঘোড়া
ধিন ধিনিয়ে ছোটে।
# ৩১.০১.২০১৯
কিছু দুষ্টমি তো থাকতেই হয়, নইলে জগতের দুষ্টমিকে রুখব কী করে।
আমাদের এই মিথ্যেটা জগতের সত্যকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করার জন্য।
ছোট ছোট মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মহাজীবনের অস্তিত্বের সত্যতা পাই।
(১০/০২/২০১৯)
# বিপরীত লিঙ্গের প্রতি হঠাৎ হঠাৎ আকর্ষণ হলো নিজের ছায়ার সাথে খেলার মতো।
# মাঝে মাঝে মনে হয়, শরীরের অনুপরমাণুর ওপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাব আছে। বিশেষ করে চাঁদের প্রভাব। যৌনতার ওপর চাঁদ ও সূর্যের সরাসরি প্রভাব রয়েছে।
(১৫/০২/২০১৯)
# (গৌর বাগদি ও কবি আল মাহমুদের মৃত্যু নিয়ে)
সে চলে গেল এমন জোছনা রাতে
সে চলে গেল মুকুল গন্ধ সাথে
সে চলে গেল এমন ফাগুন রাতে
চলে গেল ছায়া বিছানো পথে
সে চলে গেল রেখে দিল সাথে।
(১৭/০২/২০১৯)
#
ক্ষমতা যে আছে এটা বোঝানোর জন্য যারা ঘা মারে, তাদের সেই ঘা-টা প্রতিষ্ঠানের গতির বিপরীতে যায়, অনুকূলে নয়। প্রতিষ্ঠানের স্বাচ্ছন্দ গতি যে মানব সম্পদের শক্তির উপর নির্ভরশীল, আজকের দিনের সেই মানবসম্পদকে নানা সামাজিক, রাষ্ট্রিক পাথরকুচির সাথে যুদ্ধ করে চলতে হয়, সেটাকে আরো ঝরঝরে করতে গেলে তা গুঁড়ো হয়ে পাথরকুচির সাথে মিশে বিপত্তি ঘটাতে পারে। দক্ষ প্রশাসকের কাজ মানব সম্পদকে একটি শক্তি ভেবে তার সর্বোচ্চ শক্তি প্রদানের চেষ্টাকে সাহায্য, সমর্থন ও সম্মান করা।
(১৮.০২.২০১৯)
#
নিজের উপলব্ধির সাথে বেইমানি কোরো না। তাকে পাশ কাটিয়ে থেকো না। কে জানে তোমারই ওই উপলব্ধিই প্রকৃতির নিগূঢ়তম উপলব্ধ বিষয় হতে পারে একদিন।
(২৩/০২/২০১৯)
#
ভেবেছি একলা বিদায়ের বেলা
কী দেখেছি আর কী আছে বাকি
এই মনে হয় সবকিছু আছে, এই মনে হয় ফাঁকি।
কোথায় সে যাবে এই পৃথিবী কেমন হবে শেষ দিন
কত শত পথ বানাবে মানুষ কত পথ হবে লীন
এক নেভাতেই হবে কি শেষ আমার প্রবল বাসনা
তোমাদের সাথে দেবনা কি পাড়ি সেই সুদূরের নিশানা
চাপা পড়ে কি থাকব আমি সময়েরই মাঝপথে
অতল ধুলায় হারাব কি আমি রব না কি মোটে সাথে।
এসব কথা জাগে মনে আজ ক্ষণে ক্ষণে সারাদিন
এক জীবনেই হবে কি শেষ রইবে পড়ে আস্ত দিন
মহাকালেরই একটি ফোঁটা সেই কি সময় আমার
কত যে দেখার থাকবে বাকি কত রূপ সেই তাহার।
যত দেখি এই আলো আর আকাশ রাতের জোছনা
আমার বাড়ির সম্মুখ পথ আমার ঘরের বিছানা
মন বলে যেন না হারায় সব থাকে যেন চোখে লেগে
এই যে গ্রাম এই কলরব যদি না আর উঠি জেগে।
ফুরাতে বসা সময়ে বসে ভাবি কেন সব ফাঁকি
তখনই কেএক উঁকি দিয়ে বলে মেল দেখি মনআঁখি
দেখতে পাবি মহাপ্রাণ এক চিরকাল বহমান
ফুটিয়ে তোরে গায়ের পরে হয়েছে আয়ুষ্মান
তোরে দিয়ে সে নিচ্ছে শুষে জীবনের আনন্দ
তোর যা আছে হচ্ছে তার সকলই হিসাব মতো
আমি আমি করে পাসনে দুঃখ মহাআমি সে সেই
হারাসনে তুই ফুটিস আবার নতুনে তার গায়েতেই
প্রকৃতি তারে নিজেকে জানাতে দিয়েছে বাঁচার পথ
চড়ে চড়ে সে বেড়ায় অশেষ আনন্দেরই রথ
তোর যা আছে নিয়ে সব সে চলেছে চির অম্লান
আনন্দ নে দুঃখে সুখে যপ তোর সে দেবতা প্রাণ
(২৪/০২/২০১৯)
# (গান)
দান তার খুঁজে নিতে হয়
ছড়িয়ে রেখেছে বিশ্বময়।
দানের মাঝে আছে রাখা
তার হাতের পরশ ঢাকা
আড়ালে আমার বসে থেকে
পথে পথে যাচ্ছে হেঁকে
দানের কাছে ডেকে নিতে
দেখা তার তাতেই দিতে
সে যে দয়াময়।
# যেখানে শক্ত, সেখানে তুমি নরম হয়ে থাকতে পারবে না। তোমার নরমে সেখানকার শক্ত টলবে না। তবে হঁ্যা, তুমি এমন জল ঢালতে পারো, সে শক্ত গলতে পারে।
(২৫/০২/২০১৯)
#
ফেব্রুয়ারির সকালে
বাদলা দিলো হানা
আষাঢ়স্যের আমেজে
মেঘ উড়ালো ডানা।
(26/02/2019)
কদিন ধরে মেঘ। গতকাল ভোরে ঝড়ও হয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষে এমন মেঘ-বৃষ্টি অনেকটা আষাঢ়ের আমেজ ফুটিয়ে তুলেছে প্রকৃতিতে।
আজ সকালে দেখলাম পশ্চিম আকাশ জুড়ে বেশ মেঘ করেছে। চারতলার ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম। চোখের সামনে কয়েকটা বিল্ডিংয়ের ছাদ আর অনেকটা আকাশ। কিছুক্ষণের মধ্যে বাতাসে মেঘেদের উল্লাস দেখলাম। পুব আকাশের লুকায়িত রোদের আভার নীচে মেঘেদের সেই বিক্ষিপ্ত উল্লাসের সাথে একদল পায়রা ডানা অলস করে বাতাসে ভাসছিল। যেন মেঘের আনন্দ তাদের মধ্যে ঝরছে। অল্পক্ষণের এই দৃশ্যের মুগদ্ধতা মনে লেগে থাকল দীর্ঘক্ষণ।
(০১/০৩/২০১৯)
#
যে কথা রয় বিশ্ব কোণে
শুনব বলে শান্ত হয়ে
কান পাতি মনের কোণে।
#
বসন্তে নতুন পত্ররাজি ফুটেছে। কচি তাদের দেহ। তার ওপরে কয়েকদিন বৃষ্টি, ধুয়ে মুছে বেশ ঝকঝকে।
আজ আকাশ একদম পরিষ্কার। বেশ ঝলমলে। এত ঝলমলে যে, তার গভীরতর বুকের অনেকখানি দেখা যায়। নতুন পাতার পরে আলোর স্বর্ণচ্ছটা যেন সেই সুদূর গভীর থেকে এসে রূপ নিয়েছে। কেবলই মনে হচ্ছে সেই সুদূরে অনন্তকাল ধরে কে যেন আড়ালে রয়েছেন। আজ তিনি নিজেকে উন্মুক্ত করছেন। তারই মাধুরী নীরবে পরশ করে যাচ্ছে ধরাতল। এ এক অনবদ্য আশীর্বাদ। হৃদয় ব্যাকুল হয়ে ওঠে। মন কেমন করে ওঠে।
# (২২/০৩/২০১৯)
আবার উঠব জেগে
তোমাদের কারো মাঝে
রক্তধারা বইছে আমার যেখানে।
হয়তো সেদিন সন্ধ্যায়
বজ্রে কাঁপবে পৃথিবী
রোদে পুড়বে দুপুরটা
বাতাসে ভাসবে দূষণ
তবু স্নিগদ্ধ সন্ধ্যা আসবে
আসবে শীতল দুপুর
পৃথিবীর রূপের কথা বলতে
আসব সে আমি।
# (২৯/০৪/২০১৯)
আমি নেই জানার জন্যই আমি আছি।
# ) (০৭/০৫/২০১৯)
যদি হয় পৃথিবী শেষতক দুঃখময়
আমার এই অহেতুক আনন্দের পেরেক
সেই দুঃখের গায়ে ঠুকে দিলাম,
সেই আমার বড় বিজয়।।
# (১২/০৫/২০১৯)
=নিজেকে প্রস্তুত করতে করতে দেখি
যার জন্য প্রস্তুতি সে চলে গেছে
রেখে গেছে অকর্মণ্য আমাকে।
= সব ভার কি বওয়া যায়?
ভার বলে,কে বলেছে বইতে
# (১২/০৫/২০১৯)
= এ আমার দুষ্টু ভালোলাগা
ঘুমপাড়িয়ে আসল মানুষ
মৃত্যুর মত জাগা।
= আমার ভেতরে অন্ধকারে
রাক্ষসের এক চোখ থাকে
আমার দেখা আড়াল করে
দেখে যায় সে আমার করে।
# (১৭/০৫/২০১৯)
এক পা কাদায় রেখে
আরেক পা রেখেছি ওপরে―
দেখাই তারে
গোপনে কাদা মেখে যে
কাদাকে ঘৃণা করে।।
# (১৮/০৫/২০১৯)
এই যে আলো, ভালোলাগা
বুকের সাথে মিশে আছে,
দিয়ে গেলাম তোমার কাছে।
দেখে রেখো পুষে রেখো
তার হাতের কাছে।।
# (২১/০৫/২০১৯)
একটি পাখি
ডালে ডালে ঘুরে
নানান ফুল দেখে,
দিনের শেষে ফিরে এসে
তাদেরই ছবি আঁকে।
একটি পাথর
পাথর ছুঁড়লে যারে
উল্টো ফিরে আসে,
পাথর-ব্যাথায় হাসে।
পাখি পাথর হয়ে
চলি বয়ে বয়ে।
# ২১/০৬/২০১৯
আমি কুড়োতে এসেছি আমার দান
ছড়িয়ে রেখেছ আকাশে বাতাসে পাতায় পাতায়
কুড়োতে এসেছি আমার শক্তি আমার ভালো থাকা
রেখেছ ভরে আমার মননে আমার কল্পনায়।
#
(০৮/০৭/২০১৯)
দায়িত্বের চেয়ে বেশি যার কর্তৃত্বের ভার
তারে দিয়ো না তোমার কাজের ভার।
#
(১২/০৭/২০১৯)
ধর্মবিদ্বেষ, জাতিবিদ্বেষ যাদের মূল, তাদের কাছে ক্রিকেটই বা কী, আর রাজনীতিই বা কী। সব সমান। তাদের কোনো দেশ থাকে না। ধর্মই তাদের দেশ, জাতিই তাদের দেশ। তাই অন্যের স্বদেশ চেতনা তাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মতই এদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হবে শুভবুদ্ধির লোকদের।
(২৪.০৭.২০১৯)
জগতের এই চঞ্চল স্রোতটিকে পিঠের পরে ধরে রেখেছে একটি শান্ত গভীর স্রোত। খুব শান্ত হয়ে চিন্তা করলে নীচের সেই শ্রোতটির সাথে আমার স্পর্শ ঘটে। তখনই বুঝতে পারি একটা পিঁপড়ের সাথে আমার খুব একটা পার্থক্য নেই।
#. (৩০/০৭/২০১৯)
(জনতা ব্যাংক, এরিয়া অফিস, সাতক্ষীরার এজিএম মো: মতিয়ার রহমান অফিস চলাকালীন সময়েই আজ ২৯/০৭/২০১৯ তারিখে কার্ডিয়াক আরেস্টে মৃত্যুবরণ করেন, তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৭ বছর। তাঁর উদ্দেশ্যে আমার এ খোলা চিঠি)
---- ---- ---- ----
"নয়ন ছেড়ে গেলে চলে, এলে সকল মাঝে
তোমায় যদি হারাই আমি, তুমি হারাও না যে।'
সাতক্ষীরা
২৯ জুলাই, ২০১৯।
প্রিয় মতিয়ার স্যার,
গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় পৌঁছেই আপনি আমাকে ফোন করেছিলেন। আক্ষেপের সুরে দাবি নিয়ে বলেছিলেন, 'চৌধুরী, খবর নিলে না।' ওই কথাই আমার সাথে আপনার শেষ কথা ছিল। কিন্তু আপনার নির্বিকার নিথর মুখখানা দেখে মনে হচ্ছে ওই কথাটা শেষ কথা নয়। কিছু কথা শেষ হয় রেশ রাখার জন্য। কথা শেষ হলেও রেশ কখনও শেষ হয় না। আপনার সেই কথার রেশ এখন এতটাই জোরালো যে, এই রাত্রে আমাকে এই চিঠি লিখতে বসিয়েছে।
আপনি আজ অফিসে এসেছিলেন। কিন্তু অফিস থেকে আর ফিরলেন না। ফিরবেন না কখনও। আপনার "জীবন্তটা" অফিসে রয়ে গেল। আপনার "মৃতটা" আমরা রেখে এসেছি কলারোয়ায়, আপনার গ্রামের বাড়িতে। আপনার বৃদ্ধা মা এখন আপনার "মৃতটা" নিয়ে আহাজারি করছেন। তিনি হয়ত জানেন না, সাতন্ন বছর ধরে লালন-পালন করা তার আদরের মতিয়ারের "জীবন্তটা" বাংলাদেশের একটি অফিসে আটকে গেল। আটকে থাকবে চিরকাল। আর বাংলাদেশের ওই অফিস চিরকাল আপনার বৃদ্ধা মায়ের কাছে ঋণী থাকবে।
ইদানিং খুব চুপচাপ থাকতেন। কেউ দেখুক আর না দেখুক, আপনাকে ক্লান্ত-বিষন্ন দেখাতো। এখন বুঝি, ওটা ছিল আপনার প্রতিবাদ-ক্লান্তি। সংসার যাত্রায় আপনাকে ছন্দবন্ধ রাস্তা থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। প্রথমে আপনার দীর্ঘদিনের উনমাদিনী স্ত্রী, পরে এক কুটিল নারী আপনার পায়ের তলা থেকে ছন্দের পথটিকে কেড়ে নিয়েছিল। আপনি পড়ে যান নি। নিজের আয়ত্বের মধ্যে আপনি সোজা হয়ে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন। আপনার মেয়ে "মেধা" আর ছেলে "আধির" আপনার ছন্দভঙ্গ পথটির কিছুটা মেরামত করেছে, বাকিটা মেরামতের জন্য আপনি নিশ্চয়ই আপনার কর্মপরিবেশের উপর আশা রেখেছিলেন, সেই সাথে আশা রেখেছিলেন সমাজের উপর। কিন্তু আপনি তা পান নি। আপনি দেখতেন, আপনার অফিসের নৌকাটা চলে যাচ্ছে, ওই নৌকায় ওঠার কথা ছিল আপনার। কিন্তু আপনাকে অবহেলায় ফেলে রাখা হলো। কারণ কী―তা আপনি খুঁজে পেতেন না। আপনার ছন্দবন্ধ রাস্তাটিকে ভেঙে ফেলতে পাতালকোড়ের মত যে সব বালাই উঠেছিল, আপনি সেগুলো উপড়ানোর চেষ্টা করতেন। পারতেন না। ক্লান্ত হয়েছিলেন তাই।
আমার ডেস্কের সামনে খুব বসতেন আপনি। জানতেন হয়ত, আমি আপনার মনের কথা বুঝব। যতটুকু হাসতেন, সে আমার সাথেই। এর মধ্যে বদলি হলাম আমি। আপনি বুঝি খুব একা হয়ে গিয়েছিলেন তখন। মনের কথাগুলো বলার আর লোক পেতেন না হয়ত। ক্রমাগত ক্লান্ত হতে হতে অবসাদে, বিষণ্নতায় বসে বসে আপনি নিজেরই অজান্তে এক অপার শক্তির প্রার্থনা করতেন। যে শক্তি সমাজে-অফিসে আনন্দ নামাবে, উদার দৃষ্টি নামাবে, মনের সাথে মনের যোগাযোগ ঘটাবে, পারস্পরিক সহমর্মিতা, শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ ঘটাবে। আপনার সেই শক্তির প্রার্থনা বুঝি মঞ্জুর হলো আজ। শ্রাবণের নিশুতি রাতে হঠাৎ আসা ভারী বর্ষার মত সেই শক্তি বুঝি ধরা দিল আপনার কাছে। জীবন আপনাকে যে শক্তি দিতে পারেনি, মরণ আপনাকে তাই দিল। মৃত্যুর স্থান চিরস্থায়ী, জীবন ক্ষণস্থায়ী। মরণের শক্তিটা আসে, যিনি মরণের উপর জীবনের ফোঁটাটা এঁকে দিয়েছিলেন, তার কাছ থেকে। আপনার চলার ছন্দকে যারা ভেঙেছিল, সেই মূঢ়েরা জানল যে, আপনার ছন্দহীনতার এলোপাথাড়ি ঘায়ে তাদের ছন্দের গতি আজ থমকে গেছে। আপনিই শেষতক জয়ী । আপনি সেই অপার শক্তিতে শক্তিমান হয়ে সেই সকল মূঢ়ের টুঁটি চেপে বসে থাকবেন আপনার সেই নিঃশেষিত "জীবন্তটা" দিয়ে, আর তারা চিরকাল পরাস্ত থাকবে। আমি হয়তো অশোনার মত শুনতেই থাকব, " চৌধুরী, খবর নিয়ে যাও"। আপনার এই শক্তি আরেক জন "মতিয়ার রহমান" না হতে আমাদেরকে শক্তি যোগাক। আপনি শান্তিতে থাকুন।
ইতি আপনার
হতভাগ্য সহকর্মী
বাবলু
#
(৩১/০৭/২০১৯)
মৃত্যুর জলের উপর বুদবুদ হয়ে ফুটে থাকে জীবন। মৃত্যু দিয়েই গড়া সে। ফেটে গিয়ে আবার মিশে যায় মৃত্যুর জলে। মৃত্যু জীবন হয়ে দেখে নেয় নিজেকে।
#
(০১/০৮/২০১৯)
o B
= চলতি পথের ভালোলাগা চলতি পথেই থাক,
ঘরে তুললে সে আর লাগে না ভালো।
= যে মোহিনী ক্ষণকালের ভালোলাগা জাগায়, দীর্ঘকালের ভালোলাগা সে জাগাতে পারে না। সে ক্ষণকালের জন্যই আসে, দীর্ঘ ভালোলাগার নেশায় তাকে দীর্ঘকাল আঁকড়ে রাখলে ক্ষণকালীন ভালোলাগার মোহটি অপমানিত হয়।
# (০৭/০৮/২০১৯)
দূর বৃষ্টি ধূসর শম্বুক মেঘ বিস্তৃত বিল আকাশে
দূর গ্রাম ঘেরা গাছের বেড়া নিমগ্ন বর্ষা স্বাসে।
# (১৭/০৮/২০১৯)
টুপটুপ ঝমঝম বৃষ্টি পড়ে হরদম
গুড় গুড় গুড়ুম গুড়ুম মেঘ ডাকে হুড়ুম দুড়ুম
বৃষ্টি দেখি কী করে
ভয় করে ভয় করে,
গুড়ুম গুড়ুম চলে যা
বৃষ্টি শুধু রেখে যা।
# (২২/০৮/২০১৯)
সম্পর্কের দাবি নাই বা মিটুক
অভিমান যেন নিরীহের ওপর আক্রোশের তুফান হয়ে আছড়ে না পড়ে।
# (২৪/০৮/২০১৯)
কে লাগালো আগুন, ওরে আমাজান
তুই পুড়ছিস, পুড়ছে পৃথিবী
পুড়ছে জীবন, পুড়ছে আগামী।
ওরে হতভাগ্য, ওরে পৃথিবীর জান।
# (২৫/০৮/২০১৯)
চেয়ার পেয়ে সেটাকে নিজের করে নেওয়া ঠিক না, সে তো নিজের হয়ই না, উপরন্তু সেটার ওপরে অন্যের যে অধিকার থাকে, সেটাও হরণ করা হয়।
# (১২/০৯/২০১৯)
আদতে আমাদের মন মনের পথে চলে
আদতে কেউ একজন তাকে ডাকে
আদতে কোনটা তার পথ কোনটা নয় সে জানে
আদতে সে জেনেও ভুল করে।।
= উন্নত শরীরের সাথে যদি উন্নত মন থাকে, তবে তা সুজলা সুফলা পৃথিবীর মত। আর যদি মনের চাষ না থাকে, তবে তা মরুভূমির মত। যতই কাছে যাওয়া যায়, ততই খাঁ খাঁ লাগে।
# (২৯/০৯/২০১৯)
কিছু কষ্ট আছে, যা অন্যকে দেওয়া যায় না।
# (২৯/০৯/২০১৯)
মেয়েটির নাম পূর্ণিমা। সদ্য পিতৃহারা হয়েছে। পিতার নিথর মৃত দেহের উপর পড়ে শিশুর মত বুক ফাটিয়ে ওর "ও বাবা" বলে ক্রন্দনের আওয়াজ কানে লেগে আছে। এক পক্ষ শুধুই কাঁদছে, আর এক পক্ষ নিথর নিশ্চুপ। যে পিতা কন্যার কথায় আজীবন সাড়া দিয়েছে, সে একটি অবস্থার জন্য নিশ্চুপ। আমার মনে হল- সে পিতাও সাড়া দিচ্ছে, তবে তা নীরব অবস্থায়, নিরুত্তর অবস্থায়। সে পিতাও যেন বলছে―কাঁদছিস কেন? আমি তো আছি, আমি হারাইনি। জগতের নিরুত্তর অবস্থাই বেশি। অর্থাৎ নীরব অবস্থাই বেশি। আমার মনে হল, আকাশ―বাতাস সমস্ত প্রকৃতি ওই নিথর পিতার মতই সাড়া দেয়। উত্তর দেয়। সে উত্তর আমাদের অস্থিরতার মধ্যে বাজে।
# (০১/১০/২০১৯)
= চেনা পৃথিবীর মধ্যে অচেনা যেন কোথাও ছিলাম ক'দিন। সামনের পথগুলো ধূসর, আশেপাশে অনেক বদ্ধ গলি, কোন পথ পেরিয়ে সামনে এগোব, ভেবে পাওয়াই দুস্কর। ভিন দেশে আটকে থাকার পর নিজ দেশে ফেরার বেশে মনে হচ্ছে নিজেকে। বলতে ইচ্ছে করে সেই অভিজ্ঞতার কথা।
= সংসারের গভীর ঘটনাকে অনেক সময় তুচ্ছ জ্ঞান করতে হয়, নইলে নিজেকেই তুচ্ছ হয়ে যেতে হয়। তেমনি অনেক তুচ্ছ ঘটনাকে বড় জ্ঞান করতে হয়, তবেই নিজের বড়ত্ব প্রকাশ পায়।
# (০৫/১০/২০১৯)
আমি সেই প্রক্রিয়াকে শ্রদ্ধা জানাই, যে প্রক্রিয়ায় এই পৃথিবীতে আমি এসেছি। এই আলো, এই আকাশ, এই বাতাস, বৃক্ষরাজি, জল, সম্পর্ক, মানুষ, ভালোবাসা আমি পেয়েছি, সেই প্রক্রিয়াই আমার কাছে ঈশ্বর। আমি তার কিছু জানি, কিছু জানি না। যা জানি না, সেও আমার শ্রদ্ধার, যা জানি তাও। আমি জানি আমার জীবন সংক্ষিপ্ত। পৃথিবীতে এসে একটি জীবন এই অতল গভীর রহস্যময় জগতের জন্য কিছুই না বলে মনে হয়। যখন খুব শান্ত ভাবে ভাবি, আর তো কটা দিন, তারপরেই তো আমি স্তিমিত হয়ে যাব। তখন একটা দুঃখ মনের মধ্যে জেগে ওঠে। সাথে একটা আক্ষেপ। কেন এত অল্প সময়? তখনই একটা চিন্তা আমাকে শক্তি দেয়। যে প্রক্রিয়া এত সুন্দর করে সবকিছু তৈরি করেছে, আমার জীবনের সংক্ষিপ্ততা হোক, আমার জীবনের দুঃখ হোক,এ সবই তো তার। আমি কেন আক্ষেপ করব?
=
কী হবে এত আয়োজন,
যতই জানছি, ততই বুঝছি―
পোকা-মাকড়কে আমরা যেমন দেখি
আমাদেরকেও কেউ দেখে তেমন।
=
আমি আমার পরিবার ও সংস্কৃতির কাছে কৃতজ্ঞ। আমার ধর্মের কাছেও। জগৎ ও নিজেকে উজাড় করে জানতে সেগুলো আমাকে বাঁধা দেয়নি।
# (১২/১০/২০১৯)
রোদ ভেঙে পড়ছে আমাদের গ্রামে। শরৎ শেষে নতুন পাতা গজিয়েছে। মোলায়েম, স্বচ্ছ, সবুজপাতার ওপর সকালের রোদ চিক চিক করছে। শুভ্রতায় ধাঁধিয়ে যাচ্ছে চারদিক। পুকুরপাড়ে গাছের তলায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ এক ফোঁটা বাতাস উঠল। আর ওপর থেকে ফরফর করে কপালের টিপের সাইজের হলুদ পাতা বৃষ্টির মত পড়তে লাগল। ঝাঁকবাধা পায়রা উড়লে যেমন শব্দ হয়, তেমনি শব্দের সাথে ওপর থেকে ছিটানো অসংখ্য ফুলের পাপড়ির মত আমার মাথার ওপর দিয়ে সামনের পুকুরের শান্ত জলে পড়তে লাগল। ফোনে কথা বলছিলাম প্রিয়তমার সাথে। আমার কথা বলা থামিয়ে সবটুকু মনোযোগ টেনে নিল ওই ঝরাপাতার ওড়ানি। বুঝেই উঠতে পারছিলাম না কিসের পাতা। দেখলাম, এখানে বড় একটা সজনে গাছ আছে। খেয়ালই করিনি কখনও।
ভাবলাম, শুকনো হলদে পাতাগুলো বাতাসের তপস্যা করছিল। তপস্যা সার্থক হওয়ায় বাতাস কথা শুনল। বোঁটা থেকে ঝরে পড়ল পাতাগুলো। নতুনের জায়গা দিতে। আর ওরা আবার নতুন হয়ে ফোঁটার আনন্দে এই ইকোসিস্টেমে মিশতে চাইল।
প্রকৃতির শিক্ষা যদি এই হয়, তবে দুঃখ থাকে না, তা নিরন্তর আনন্দ জাগায়।
#(১৪/১০/২০১৯)
যে স্বামী জীবদ্দশায় মৃত্যুকালের মত স্ত্রীর স্বামী-শোকের কান্না দেখে, তার মত হতভাগ্য আর কে আছে!
# (২২/১০/২০১৯)
অগণিত জীবজগত রয়েছে এ মহাবিশ্বে। মরে, আবার জন্মায়।
# (২৪/১০/২০১৯)
কদিন ধরে বর্ষাকালের মত আকাশ মেঘে ভরে আছে। গতকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি। কখনও ঝুপটুপ করে এক নাগাড়ে, কখনও জোরে। যেন শ্রাবণ এসেছে হেমন্তে।
বৃষ্টি যেন মায়া কাটাতে পারছেই না। একেবারে চলে যাওয়ার আগে হয়ত এত বেশি করে আসা তার।
# (২৯/১০/২০১৯)
রাগ সহ্য করা যায়, অবহেলা সহ্য করা যায় না।
-অন্তরলোকেই অন্তহীনের নাগাল পাওয়া যায়।
# ( ০৫/১১/২০১৯)
ক্লান্তিধরা একঘেয়েমি
রাখলো ঢেকে যারে,
থেকে থেকে তার জন্যে
মন কেমন করে।
আলোর পাশে আঁধার যেমন
তেমনি আছে পড়ে
সেই আঁধারে মনের আলো
জাগছে নড়ে নড়ে।
# (০৬/১১/২০১৯)
একজন মানুষ তখনই বীরপুরুষ হয়ে ওঠে যখন সে তার বিবেচনালব্ধ কাজগুলি সম্পাদনের প্রতি কমিটেড হয় এবং অন্ধের মতো সেগুলি শেষ করে।
# (১৪/১২/২০১৯)
আমার অন্তর্লোকে যে রোদের ছবিখানি ভাসে, তা আমি দেখেছি আমার বাড়ির উঠোনে ,শীতের-সকালে। নারকেল গাছের পাশ দিয়ে ঝরে পড়া কুয়াশা ওড়া সেই রোদ বড় ভালো লাগে। মায়ের কোলের মত ওম মেশানো সেই নির্জন রোদ আমাকে টানে। সেই রোদ যেমন জগতের,তেমনি আমিও। যেমন নির্ভার ও সরল, ধ্যানে ও মননে আমাকেও তেমন হতে হয়। মনুষ্যলোকের বাইরের বলে সেই রোদ স্বর্গীয়, আমার মধ্যেও মাঝে মাঝে তেমন স্বর্গীয় কিছুর আগমন ঘটে। সেই রোদের প্রতি ভালোলাগা আমাকে সেটি দেখিয়ে দেয়।
= প্রকৃতির প্রতি: তোমার হাতে এখনো অনেক কিছু আছে, যা আমি ভাবতে পারিনা।
# (১২/০১/২০২০)
প্রকৃতি যেমন অনেক কিছু লুকিয়ে রাখে, দেখতে দেয় না, জীবের প্রবৃত্তির মধ্যেও তেমনি লুকানো ভাব দেখা যায়।
আজকের যে ভারতীয় প্লেট, তা বহু বছর আগে অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার সাথে সংযুক্ত ছিল। মিলিয়ন মিলিয়ন বছর আগে তা বিচ্ছিন্ন হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে সরে আসতে থাকে, এবং সেই প্রক্রিয়া এখনও চলমান। পৃথিবী তার পেটের মধ্যে এখনও সেই পুরাতন শীলার ও প্রাণীজ ফসিল লুকিয়ে রেখেছে। তা-ই পরীক্ষা করে ভূতত্ত্ববিদেরা ভারতীয় প্লেটের এই উত্তর-যাত্রা সম্বন্ধে নিশ্চিত হয়েছেন।
= শিফটিং হচ্ছে প্রাকৃতিক শিক্ষা; এবং বর্তমানটা ক্ষণিক―যা নিয়ত পরিবর্তনের মধ্যে ঢুকছে।
= মনের দুর্বলতা মনের শক্তি দিয়েই ঠেকাতে হয়।
# (১৫/০১/২০২০)
ডিম আলুর তরকারি
মা'র হাতে রান্না
এই সকালে এই ছাড়া
আর কিছু চাইনা।
# (০৭/০২/২০২০)
আমার মন যখন পথের বাঁকের মত আরেক দিকে ঘুরে থাকে, ঘুরে ঘুরে শুধু চলতেই থাকে, তখনই কোকিলের মত পাশ থেকে ডেকে, বৃক্ষ-পাতা-আকাশ থেকে ঝরে পড়া মায়ের মমতার মত শিল্পরুপের দিকে টেনে থমকে দেয় যা, সত্যজিত রায়ের এই সুরটি তারই মত। সুরটা মনে হয় বহু দূর থেকে আসছে, কিন্তু তার উচ্চতা এতটুকুও কমেনি। মানুষের তৈরী ওই শিল্পরুপ তখন নিজের মধ্যে অটকানো অবস্থায় দেখতে পাই, অল্প জলে বাঁধা মাছের মত সে ছটফট করে। তাকে বের করাই আসল কাজ বলে মন জানিয়ে দেয়।
https://web.facebook.com/bablu.chowdhury.10/videos/2382913001739661/
https://drive.google.com/open?id=1fp02V8W_qFtHJZqoNQb1T2dhD8zeA5US
=
আমাকে কাঁচের গ্লাসের মত ভেঙে ফেললে
ফেলো, আপত্তি নেই
তোমার পা-টা সরিও
কেটে যেতে পারে
বিশ্বাস করো, আমার টুকরোগুলো জীবন্ত
সুযোগ পেলে আবার একত্রিত হবে।
# (09/02/2020)
মেঘ তাড়ালো রোদ এসে
হায়!...ছুটির শেষে।
# (১২/০২/২০২০)
আমি বলার জন্য লিখতে বসি, লেখার জন্য বলতে বসি না।
# (১২/০২/২০২০)
বৈষয়িক ব্যাপারে মাঝে মাঝে এমন হচপচ হই যে, সেটি ঠিক, না আমি ঠিক–প্রশ্ন জাগে।
= আমার দুটো পক্ষ, এক-আমি, আর সমস্ত বিশ্বজগত। দুটো সময়, এক-আমার , আর এক অনন্তের। দুটোতে দেখা-দেখি চলে। ক্লান্ত তো একদিন হতেই হবে। দেখাদেখি বন্ধ হবে। এই আমি যেমন শেষ হয়ে নতুনে ধরে, বিশ্বজগত তেমনি শেষ হয়ে,আরেক নতুন বিশ্বজগতে ধরবে। এ থেকে রক্ষার উপায় কই?
= অজানা পর্যন্ত সবই রহস্য। বিশ্বজগতের যা জানা যায়নি, তাই রহস্য। আজকের মানুষ চারদিকে জানছে। অন্য কোথাও প্রাণ আছে কিনা, খোঁজা হচ্ছে, বাঁচার জন্য নতুন নতুন ব্যবসা নামাচ্ছে। পণ্যের প্রচারে আমিত্ব জোর হচ্ছে। জলবায়ু নষ্টের দিকে যাচ্ছে, তা বুঝতে পারছে। অসম্ভবকে সম্ভভ করার জন্য নতুন নতুন যন্ত্র তৈরী করছে। যন্ত্র দিয়েই অনেক কিছু অসাধ্য সাধন করতে চাইছে।
# (১৩/০২/২০২০)
একলা ঘরে মাথার পরে হাত ছোঁয়াল যখন
ঘুমের মধ্যে মুখটা তার দেখতে পেলাম
ঠিক এসিড দগ্ধের মত ঝলসানো,
তবু মধুর তার হাতের পরশ
আবেশেই স্বপ্ন দেখছিলাম বুঝি,
তাই কিনা জানিনা, দেখলাম―
দারুণ এক সুষমা গ্লাসে আটকানো সূরার মত
তার শরীরে উঁকি দিচ্ছে।
কেমন করে জানিনা ঘুম ভেঙে গেল,
শুন্য ঘরে আমার কেউ নেই
তবু সেই সুষমার মত কে যেন আটকে আছে অন্ধকারে।
নদীর ঢেউয়ের মত উছলিত মন
প্রশ্ন করে, "কে?"
দরজার ওপার হতে কে এক উত্তর দেয়,
"বসন্ত।"
# (১৯/০২/২০২০)
যখন দিগন্তে আমারই জন্যে আকাশ ওঠে, দিনের ব্যস্ততায় যেমন তাকে হারিয়ে ফেলি, পূর্ণিমা যখন চলে যায়, মনে হয় সে ওই আকাশ।
# (২১.০২.২০২০)
এখন বসন্ত। গ্রাম্য পথ ধরে যাচ্ছি। আমাদের প্রিয় যে তুহিন ভাই, তার মা মারা গেছেন। আমাদের গ্রাম থেকে দু গ্রাম দূরে তাদের বাড়ি। সেখানে যাচ্ছি মোটরসাইকেলে চেপে।
কুয়াসা ছিল। রোদের বুকে লুকোতে লুকোতে এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। গাছের ফাঁকে, পাতার ফাঁকে, মাঠের পরে তাই ধোঁয়া ধোঁয়া। ঝলমলে রোদে জ¦লছে সেই ‘ধোঁয়া ধোঁয়া’। স্বর্গ দেখিনি, তবু মনে হচ্ছেÑস্বর্গের রোশনাইয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মাথার পরে আমের ডাল। দুপাশে ফসলি জমি। বাঁশঝাঁড়ের তলায় পুকুর। আমের মুকুল আর বুনো ফুলের গন্ধ ভেসে আসছে। শুকনো ঘাস জমিতে পতঙ্গের ওড়াউড়ি দেখছি। গাড়ির হর্ণ নেই, চিৎকার-চেঁচামেচি নাই।
বহুদিন পরে এই পথে যাচ্ছি। ্এটা আমার হাইস্কুলের পথ। হাইস্কুল রেখে আরও দূরে যেতে হচ্ছে। কুশলে, চাঁচাই, পারুলগাছা, বেলেডাঙা হয়ে কৃষ্ণনগর গ্রাম। আমাদের হাইস্কুল কুশলে গ্রামে। সেই ত্রিশ বছর আগে হাইস্কুল ছেড়েছি। হাইস্কুল ছাড়িয়ে বাঁকি পথে খুব বেশি যাওয়া হয়নি। কিন্তু যা দু’একবার গিয়েছি, সেগুলোর ছবি মনের মধ্যে দারুণভাবে লেগে আছে এখনও। স্কুলের পূবদিকে মাঠ। এই মাঠে ফুটবল খেলা দেখতাম। সেই মাঠের পাশ দিয়ে রাস্তা চলে গেছে চাঁচাই গ্রামের মধ্যে , তারপর গ্রাম থেতে গ্রামে। দেখলাম, শুধু ধুলোর রাস্তা আর নেই, পিচঢালা পাকা রাস্তা হয়েছে। যে নীচু জমিগুলো ছিল, দীর্ঘদিনের পলিমাটি জমে জমে সেগুলো ভরাট হয়েছে। উঁুঁচু হয়েছে। কুললে হাঁটখোলাটার মাঝে মাঝে পাকা দোকানপাট ্উঠেছে। তাছাড়া আর সবই প্রায়ই তেমনই আছে। যে পরিবর্তনটুকু চোখে পড়ল, মনে যেন তার চেয়ে বেশি পরিবর্তনের আঁচ ছিল। তাই আরও ভালো লাগল।
তুহিন ভাইয়ের বাড়িতে পৌঁছলাম। তিনি বেশ শান্ত। উচ্ছল। রাস্তার পাশ ঘেঁষেই তাদের উঠোন। দোতলা বাড়ি। কেউ বড় একটা থাকে না। কিছুটা অযত্ন লেগে আছে । রঙ-চঙ উঠে গেছে, বিবর্ণ।
বাড়ির ভেতরে তুহিন ভাইয়ের মায়ের সৎকারের কাজ চলছে। আমি বাইরে একটা চেয়ারে বসলাম। আমের মুকুলের গন্ধ লাগছে নাকে, ভেসে আসছে পাখির ডাক।
তার মাকে আমি কখনও দেখিনি। বেশি বয়সও হয়নি তার। হঠাৎ করেই তিনি মারা গেলেন।
এই মরা বাড়িতে এসে আমার মনে হল-বসন্তে, কত কাঁচা-পাকা পাতা ঝরে যায়, কত ফুল ফোঁটে।
(২১.০২.২০২০)
# এত ফুল এত বোল এত মৌ গন্ধ
বাঁচবে এ পৃথিবীটা নেই মোটে সন্দ।
# (২২.০২.২০২০)
প্রকৃতির হাতে একটা অস্ত্র আছে, মৃত্যু। প্রতিটি মৃত্যু নতুন জন্মের জন্য, ভিন্ন আকৃতির জন্য।
# (২৮.০২.২০২০)
শীতোষ্ণ বসন্তের পূর্বাহ্ন। ঘুমন্ত মানুষের নিশ্বাসের মত বাতস ওঠে। পাকা রাস্তার পরে শুকনো পাতা ঝরে পড়ে। যতদূর দেখা যায় রাস্তা ফাঁকা। আজ শুক্রবার। ছুটির দিন। লোকচলাচল চোখে পড়ার মত কম। শহরের মধ্যে, কিন্তু যেন শহর থেকে দূরে এই রাস্তা। এই সাতক্ষীরা শহর পশ্চিম দিকে প্রসারিত হচ্ছে। পূব দিকের এই রাস্তা তাই বিছানার তলায় চাপাপড়া বেড সিটের মত পড়ে থাকে। রাস্তার দু পাশে ঘাস জমি, গাছ, বাড়ি, ঘাস-জড়ানো নালা। কোকিলের ডাক ভেসে আসে। সাতক্ষীরা রাজার বাগান কলেজের পূব দিকের এই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ভাবি, একশ বছর পর কেমন হবে রাস্তাটা? এটা জানতে গেলে একশ বছর আগে কেমন ছিল এই জয়গা সেটা জানতে হবে। একশ বছরে কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে, তা জেনে আগামী একশ বছরে এই পরিবর্তন কোথায় যাবে-সে বিষয়ে আন্দাজ করা যায়। যদিও আগামী পরিবর্তনগুলো খুব তাড়াতাড়ি ঘটবে। কেননা মানুষের হাতে যন্ত্র এসে গেছে। মানুষের সাথে, যন্ত্রের শক্তি মিলে দ্বিগুণ, চারগুণ, কিংবা তারও বেশি গতিতে কাজ চলবে।
কিন্তু বিগত একশ বছরের তথ্য আমার হাতে নেই। ধারণা করা যায়, এসব এলাকায় বনজঙ্গল ছিল। বাগান ছিল। ধুধু বিল-প্রান্তর ছিল। কারণ এ সবের চিহ্ন এখনও আছে। যা হোক, আমার মেজো কাকা ছোট বেলায় এসব এলাকায় ঘন বাগান দেখেছেন। তাঁর বয়স এখন পয়ষট্টি বছর।
# (০১.০৩.২০২০)
চারিদিকের ঝঞ্ঝা বলে দেয়, আমার মূল আরো গভীরে প্রথিত করতে হবে।
# (০৬/০৩/২০২০)
=চিতায় ওঠার আগে পাতায় ওঠার চেষ্টা করি।
=মেঘ নেমে আসে আমের বনে
আলো মরে ঘুরে
আমি একা বসে আছি
না যেতে পারি দূরে।।
= ঝিরঝিরে হাওয়া বয়
ফাগুন দিনের কোণে
কোকিল ডাকে কুহুকুহু
ভাল্লাগেনা মনে।
= আমি ছবি আঁকতে পারিনা। দুয়েকটি লিখতে পারি। তাই লেখার মাঝে ছবি রেখে যাই।
# (২২/০৩/২০২০)
দূরে সরিয়ে রাখো করোনার ভয়
যদি করতে চাও করোনাকে জয়।
# (২৭/০৩/২০২০)
আকাশ ছড়িয়ে দিচ্ছে মুঠো মুঠো শুভ্রতা চোখে মুখে।
চৈত্রের দুপুরে।
# (২৭.০৩.২০২০)
সারাদিন আলো ঢেলে সন্ধ্যা মাখছে আকাশ
দু একটা তারা উঁকি দিচ্ছে,
পাতায় পাতায় মিশেছে আঁধার
দু একটা বাদুড় উড়ছে,
শান্ত গ্রাম আমার
কাগজের নৌকার মত একফালি চাঁদ
চুপ করে আছে বসে
পশ্চিম আকাশে
পাশে তার বৃহস্পতি ড্যাবডেবিয়ে চায়
কাঁঠালপাতার ফাঁকে
চৈত্র হাওয়ায়,
কালপুরুষ আর সপ্তর্ষী ওইখানে মিলেছে।
এই ক্ষণ এই মিলন
হারাবে একটু পরেই
চোখ জুড়ে আবেশ তার
তাও যাবে ক্ষয়ে
শুধু সময়খানি রবে কোথাও
বেড়াবে বয়ে বয়ে।
# (০১/০৪/২০২০)
রৌদ্র বুক খুলে নিজেকে রেখে যায় পাতায় পাতায়
আকাশ ঢেলে দেয় আলোর ফোয়ারা
# (০২/০৪/২০২০)
আকাশ খুলেছে অবারিত দ্বার
বিভ্রম ঝোলানো সারি সারি
ক্ষুদ্র আমি অনেক দূরে
কেমনে তা দেখতে পারি?
# (০৭/০৪/২০২০)
মৃত্যু মুঠোয় করে চলছি। করোনা ঘাড়ের ওপরে নিঃশ্বাস ফেলছে। তবু একটা বিশ্বাস জন্মাচ্ছে যে, কিছু হবে না। মনে পড়ছে মাস তিনেক আগের একটা ঘটনা। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল সেটা। গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। সকাল দশটার দিকে নাস্তা করে মায়ের ঘরের বিছানায় শুয়ে শুয়ে একটু সময় কাটানোর জন্য ইন্টারনেটে ঢু মেরেছি। অনলাইন সংবাদ দেখছি বিভিন্ন সাইট ঘেঁটে ঘেঁটে। ভারতের বাংলা দৈনিক ‘আনন্দ বাজার’ এর অনলাইন ভার্সনটা পড়ছি। দেখলাম ‘নভেল করোনা ভাইরাস’ বিষয়ে একটা খবর রয়েছে। খবরটা- ‘এবার আসছে নভেল করোনা ভাইরাস’ টাইপের। আমার নজরে ‘ভাইরাস’ শব্দটার চেয়ে ‘নভেল’ শব্দটি বেশি করে লেগেছিল। খবরের ভেতরে ঠুকলাম। দেখলাম চিনের হুবেহ প্রদেশের রজধানী উহানের একটা বাজার থেকে ফেরা একজন মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই বাজারে এমন কোন প্রাণী বিক্রির জন্য ছিল, যার শরীর থেকে লাফিয়ে মানুষের শরীরে ঢুকেছে এই ভাইরাস। যখন পড়ছিলাম, তখনই মনের মধ্যে একটা বিশ্বাসের দেয়াল তৈরী হল; এবং সেই দেওয়ালের ভেতর থেকে ‘আমাদের কিচ্ছু হবে না’ এবং ‘এতদূর আসবে না’ - এ রকম ভাবনা উপচে পড়ে নিশ্চিন্ত করে দিয়েছিল। পরে যথারীতি অন্যান্য সংবাদে চলে গিয়েছিলাম।
ক’দিনের মধ্যে আমাদের দেশের সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, উহানে হাজার হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, সুনামীর বেগে ছড়িয়ে পড়ছে সংক্রমণ। ঠেকাতে পুরো উহান লকড্ করেছে চিনা প্রশাসন। তারপর মৃত্যুর খবর আসতে লাগল। অনেক সত্য-মিথ্যা গল্প, ভয় জাগানো কাহিনী, গুজব, সরল-ধর্মীয় ব্যাখ্যা ইত্যাদির খবরে পত্রিকা এবং সামাজিক মাধ্যমগুলো মুখর হয়ে থাকল। তাদের প্রচার ও পশার দুটোই চলতে লাগল বেশ বেগে। তখনও একটা বিশ্বাস, আমাদের দিকে আসবে না। বিশ্বাস নিয়ে বসে আছি, আর একের পর এক খবর আসতে লাগল-ইরান, ইটালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি কাঁপাচ্ছে করোনা। বৃটেন, আমেরিকাকে চষে ফেলছে। ভারতেও একটু-আধটু হানা দিয়েছে। তখন বিশ্বাসের থলেতে একটু একটু ভয় জমতে শুরু করল। কিন্তু বিশ্বাসের প্রবল শক্তির কাছে সে ভয়ও হার মেনে থাকতে লাগল। এরপর খবর আসতে লাগল, ইউরোপ-আমেরিকায় শত শত মানুষ মরছে, যতদিন যাচ্ছে-সুপারগতিতে বাড়ছে সংক্রমণ, সে গতি এমন গতি যে, মুহুর্তেই যেন পুরো পৃথিবীকে কষে পদাঘাত করে লাফিয়ে ছড়িয়ে পড়বে সারা সৌরজগতে। করোনা ভাইরাসের অদৃশ্য পাহাড়ী পদভারে মানুষ ত্রাহি ত্রাহি করে রাস্তা-ঘাট, নিজেদের তৈরী পার্ক, রেস্তোরা, অফিস, শপিংমল-সব ছেড়ে ঘরের মধ্যে ঢুকেছে। এ যেন অদৃশ্য গডজিলা। যে কিনা তার আকাশ ছোঁয়া বিশাল দেহ নিয়ে শহরের রাস্তা দাপিয়ে বেড়ায়, বড় বড় বিল্ডিং পায়ের তলায় পিঁপড়ের মত পিষে দেয়, সামান্য লেজের ছোঁয়ায় মাটি সমান হয়ে যায় যুগ যুগের বড় বড় টাওয়ার। তারপর খবর শুনতে পেলাম, ঘরে থাকলেও বিপদ কমছে না। খাবার, ওষুধ, শিশুখাদ্য কিনতে অধবা অসুস্থ নিকটাত্মীয়কে সাহার্য করতে যেই একটু ঘরের বাইরে যেতে হচ্ছে, সুযোগের সন্ধানে ঘাপটি মেরে থাকা করোনা অমনি চোখের অজান্তে ঢুকে পড়ছে মানুষের শরীরে। বাসা বেঁধে ফেলছে তার প্রজাতির। কোটি কোটি সদস্য তৈরী করছে। এবার সেই মানুষটি হয়ে গেল করোনা -ড্রাকুলা। যাকে ছুঁলে ভালো মানুষেরও করোনায় ধরবে। ড্রাকুলা যেমন রক্ত পান করলে সেই মানুষটিও ড্রাকুলা হয়ে যায়, তেমন। জানাজানি হলে শুরু হল আক্রান্ত সেই করোনা-মানুষটির প্রতি বেজায় ভয়ের অধ্যায়, তাকে কুষ্ঠ রোগীর মত একাকী ঘরে আটকে রাখার শ্মশান-সংস্কৃতি। করোনার কালো-পাশে আবদ্ধ হবে না বলে, করোনা-মানুষটিকে দেখলেই ঘরে দোর, হাসপাতালের গেট বন্ধ, দৌড়ে পলায়ন এ্যাম্বুলেন্সের। মৃত করোনা-মানুষটি, যে কিনা কদিন আগে ছিল কারো পিতা, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বন্ধু, কারো সন্তান, করোনা-আতঙ্কের দাঁত বের করে পড়ে থাকে সৎকার বিহীন। তার গায়ের পচা গন্ধে রাক্ষস-নৃত্য করে কোটি কোটি করোনা কীট।
এসব খবর শুনছি, তবুও বিশ্বাস-বাংলাদেশের এই প্রতন্ত অঞ্চলে আসবে না করোনা। ভূতের গল্প শুনতে শুনতে বাচ্চারা যেমন কোলের মধ্যে গুঁটিশুটি মেরে থাকে, আমরাও তেমন থাকি। হঠাৎ দেখি আমার শহরেও করোনার আঁচড়। এক আত্মীয় অসুস্থ বলে, ওষুধ নিয়ে বের হতে হল সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টার দিকে। রাস্তায় নেমে মনে হল-এ সাতক্ষীরা না, এ অন্য কোথাও। তুলি আছে, রঙ আছে-শুধু শিল্পী নেই, সেই রঙ-তুলির মতো বন্ধ দোকানগুলো হা-হা করছে। রাস্তাঘাট পড়ে আছে মানবশুন্য, মনে হচ্ছে কোন কালে এখানে মানুষের সভ্যতা ছিল, কী এক অজ্ঞাত কারণে সব মানুষ উথাও হয়েছে। দূর থেকে আকাশবাণীর মত ভেসে আসছে সতর্কবার্তা, সে বার্তায় আশংকা এতখানি প্রকট যে, শুধু ঘরে না, পাতালে প্রবেশ করে থাকলে ভালো হয়। কোন ভ্যান-রিক্সা পেলাম না। হাঁটতে হাঁটতে যাচ্ছি। মাটিতে এত অশান্তি, কিন্তু আকাশে তার কোন লক্ষণ নেই। পূব আকাশে বড় গোল চাঁদ। সরকারী কলেজের বিশাল বিশাল গাছের শাখার কাছে আলো ছড়াচ্ছে পূর্ণিমার সেই চাঁদ। বইতে পড়া পুরাকালের কোন নির্জন প্রান্তর বলে মনে হচ্ছে আজকের শহর। শিয়াল-কুকর হুড়োহুড়ি করছে রাস্তায় এসে, এ যেন বন-পথ। করোনার সুনামী যে গভীর শক্তিতে এগিয়ে আসছে, এবং এ শহর প্লাবিত হতে আর বেশি দেরি নেই-সেরকম একটা আশংকা জাগল মনে। তবুও বিশ্বাস-হয়ত আসবে না, হয়ত ঘুরে যাবে অন্যখানে, হয়ত থেমে যাবে। সেই বিশ্বাসের থলেতেও কালো হাত ঢুকালো করোনা, যখন মোবাইলে প্রথম আলো পত্রিকা পড়ে জানলাম, সাতক্ষীরায় ৩৪ জনের নমুনা টেস্ট করতে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যদুটি লোকাল অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘দি ডেইলি সাতক্ষীরা’ এবং ‘দ্য এডিটরস ডট নেট’ এ জানলাম জ্বর, শ্বাস-কষ্ট থাকায় কয়েকজনকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
খাদকের পায়ের শব্দ শুনতে পাই। মনে হচ্ছে চার পাশে ঘুরছে। নিশান ঠিক পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বে। এ অবস্থায় ঘর থেকে বের হতে আসলেই ভয় করছে। কিন্তু আমার সে উপায় নেই। মানুষকে সেবা দিতে আমাকে ব্যাংকে যেতে হচ্ছে। আজ আমাদের প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেছেন, করোনার সময় যেসব কর্মকর্তা. কর্মচারী প্রতক্ষভাবে কাজ করেছেন, তাদেরকে পুরস্কৃত করবেন। আমরা যারা ব্যাংকার, মুঠোর মধ্যে মৃত্যুকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষের সেবা দিচ্ছি, পুরষ্কারের রাজ-হস্ত যেন আমাদের পর্যন্ত প্রসারিত থাকে।
=
এখন খবর দেখলেই আঁতকে উঠতে হয়। সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা আশি হাজার ছাড়াল। আমাদের দেশেও বাড়ছে। এখানে ওখানে শ্বাসকষ্টে মরে যাওয়ার সংবাদ আসছে। সেগুলো হিসাবের বাইরে।
# (০৯/০৪/২০২০)
বলা হচ্ছে, মানুষের এত জ্ঞান, এত উন্নতি , এই করোনার সময়ে সব কোথায় গেল। আসলে, মানুষ জ্ঞান-বিজ্ঞানে এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রকৃতির অগাধ রহস্য বোঝার জন্য সে অতি সামান্য।
# (১১.০৪.২০২০)
যে যাবার সে যাবে,
যে দিকে না যেতে প্রার্থণা-
আরো ভালো দিকে যেতে কবুল হবে
সময়ই তা বলে দেবে।
#(১৩/০৪/২০২০)
আমি চোখ রাখি
চোখ রাখতে রাখতে আমার শরীর
ম্যাচকাঠির বারুদের মত ফুস করে জ্বলেপুড়ে ভস্ম হয়ে যায়...
আমার চোখ থেকে যায়, আমি চোখ রাখি
যেখানে আমার যাওয়ার কথা ছিল
সেখানে আমি চোখ রাখি
চোখ রাখব, যতদিন পৃথিবী থাকবে।
================
# (২৪/০৪/২০২০)
লেখালেখির বিষয়ে আমার মতটি হচ্ছে-আগে আমার মনের আনন্দ, তারপর অন্যের আনন্দ।
##
(২৫/০৪/২০২০)
ওই যে দূরে আরো শান্তি, আরো সৃষ্টি, আরো আনন্দ ঢালবে বলে,
এই যে এখানে হে রুদ্র, আরো প্রখর হও তুমি।
##
(২৭.০৪.২০২০)
ছোট গল্পের শেষটা হবে তার মতন, যাকে দেখেও দেখা যায় না, বুঝেও বোঝা যায় না, অথচ যার ভালোবাসা হঠাৎ আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে, মায়ের মতন।
# (০৯/০৭/২০২০)
ঝঞ্ঝা বিক্ষুব্ধ সময়ে যদি আমি স্তব্ধ হয়ে যাই, তবে আমার আগের সরব অবস্থা স্রেফ শখের ও সৌখিনতাবশত , তা কারো কাজে আসবে না।
(১২/০৭/২০২০)
# আমার শান্তি যেন ঈশ্বরের উপভোগ্য হয়।
#রোদ কখনও বলে না, "আমাকে দেখো।" রোদকে আমাদের দেখতেই হয়।
(১৫/০৭/২০২০)
# "স্বয়ং" একটা বড় শক্তি। ধ্যানের মাধ্যমেই সেটাকে অনুভব করতে হয়। ভেতরের "স্বয়ং"কে সহায়তা করা আমাদের কর্তব্য।
(১৬/০৭/২০২০)
# আটকে যে আছে জীবনের মোহে, তাকে আটকাবে কে?
(২১/০৭/২০২০)
চারদিক অন্ধকার করে ঝরঝর বৃষ্টি হচ্ছে। ক’দিন আকাশ জুড়ে মেঘ ছিল, বৃষ্টি ছিল না। তখনই বুঝেছিলাম, বর্ষাধারা নামতে দেরি নেই। তাই হল আজ। গাছপালার উপর বর্ষা-পতন, উঠোনে বৃষ্টি জলের স্রোত দেখছিলাম । এ বছর এখনও বৃষ্টি উপভোগ করা হয়নি আমার। আজ সেই খিদের কিছুটা উপসম হল।
স্থান, কাল, পাত্রের ভালো-মন্দে আমরা বাঁধা। যে অনুকুল উপসর্গ জুটলে রঙধনু তৈরী হয়, আবার তা মিলিয়ে যায়, আমাদের সময় ও জীবন সেরকমই। দুঃখ করার কিছু নেই। বরং আনন্দ করা উচিত। কারণ জ্গতের নিয়মই তাই। শুধু সেই উপসর্গ মেলে যে শক্তিতে, তার প্রতি হৃদয়যোগ লাগাতেই আমার শান্তি। আমার প্রকৃতি শান্তি। এই বর্ষায় তাই বললাম-
‘এই বর্ষা, এই খেলাঘর
আমার বাধা, আমার চাওয়া
মিটল যে, বুঝেছি তা
হে ঈশ্বর।
কাউকে বোঝাতে যাইনে তা
বুঝেছি নিজে, কোন উপায়ে
তোমার পরশ পেয়েছি
হে ঈশ্বর।’
# (২২/০৭/২০২০)
= বায়ু এবং কল্পনাশক্তিই সবচেয়ে প্রভাবশালী ও শক্তিশালী।
= মহাভারত হল স্নেহ, ক্ষমতা, মোহ, লোভ, দ্বিধা, শিক্ষা, কুশিক্ষা, ধর্মের ব্যবহার ও অপব্যবহার ইত্যাদি মানব চরিত্রের চিরায়ত রূপ ও সেগুলির দ্বারা সিদ্ধ ট্র্যাজেডি ও মঙ্গলের উন্মোচন; এবং বিশ্ব-প্রকৃতির সার জ্ঞান উপলবদ্ধির গাইড, যা দ্বারা আনন্দ লাভ হয় এবং সমগ্র মহাকালকে সংক্ষিপ্ত জীবনে জানা যায়।
# (২৩/০৭/২০২০)
বৃষ্টি দেখা আমার কাছে অলৌকিক কিছু দেখার মত। এর ঘন পতনে চোখ রেখে যে অনুভূতি হয়, তা বহু পুরাতন। কোটি বছর ধরে বর্ষা পতনে এ পৃথিবীর প্রতিটি কণায় যে বিষ্ময়ানুভূতি জাগে, আমার অনুভূতিতে তা-ই ধরা দেয়। আমার কাছে তার কিছু বোধ্য, কিছু অবোধ্য। দুই মিলে তা এমন এক আনন্দের জন্ম দেয়, মনে হয় তা শুধু আমার নয়, পুরো সৃষ্টির। আমি তখন সৃষ্টির ছোট্ট একটা উপকরণ হিসেবে নিজেকে দেখে কম্পিত হই।
# ২৭/০৭/২০২০)
একবার জ্বরের সময় আমি একটা গল্প লিখেছিলাম। তখন আমি দশম কিংবা একাদশ শ্রেণীতে পড়ি। আমাদের মাটির বারান্দায় মাদুরের বিছানায় বসে নিউজপ্রিন্ট কাগজে লিখেছিলাম। আসপাশে মা রয়েছে, ঠাম্মা রয়েছে। জ্বরে গার মধ্যে চিড়িক দিচ্ছে। তীব্র জ্বরের ওম দিয়ে জড়ানো নিজের সত্বাটিকে নিরাপদ অনুভূত হয়েছিল,নতুন ও রোমান্টিক মনে হয়েছিল। গল্পটা ছিল গানের মত, অর্থ্যাৎ প্রথম যে কয়টা লাইন দিয়ে শুরু হবে, প্যারা বা লেখার শেষে তাই ফিরে ফিরে আসবে। এই মেথডটা আমি বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর এর লেখা থেকে পেয়েছি। প্রথম লাইনটা এখনো মনে আছে, "তখন টেপরেকর্ডারে রবীন্দ্রনাথের…'। গল্পটা মাকে শুনিয়েছিলাম। যতদূর মনে পড়ে মা'র খুব পছন্দ হয়েছিল।
এতদিন কিন্তু মনেই ছিল না। আজ যে আমার জ্বর। জ্বরে মনে হয় জ্বরের ঘটনা মনে পড়ে।
----
# (২৭/০৭/২০২০)
এই মাটিতে যারা জন্মাবে, তারা যেকোন ধর্মীয় কড়াকড়ির বাইরে গিয়ে মুক্তচিন্তা করলে, তাদের মধ্যে যে "ফিলোসফি অফ লাইফ" তৈরী হবে, তা রামায়ন-মহাভারত ও পুরাণের মধ্যে ঢুকে রয়েছে। এই সমস্ত গ্রন্থ আগে থেকে না পড়লেও তাদের জীবন-মৃত্যু-জগৎ ভাবনা এবং কাজ ও লক্ষ্য তেমনি হবে।
# (৩০.০৭.২০২০)
চতুর্দিক থেকে হায়েনার পালে ঘিরে ধরা হরিণ শাবক যেমন মৃত্যুভয়ে পাগলপারা হয়ে ওঠে, পরিচিত চারণভূমি তার কাছে যেমন হয়ে ওঠে অচেনা শত্রুশালা, করোনা উপসর্গের কারণে ঠিক তেমন পরিস্থিতিতে রয়েছি আমি। হঠাৎ সেই রবীন্দ্রসংগিতটি মনে পড়ল, `আছে দু:খ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।‘
গানটি গাইলাম। দেখতে পেলাম, আমি যে স্তব্ধ হয়ে আছি, আসলে জগত তো স্তব্ধ না। সূর্য উঠছে, রাত্রি হচ্ছে, চাঁদ উঠছে-সবই তো চলছে। কোন অভিমানে মন খারাপ করে আমি বসে আছি? মুত্যু তো চিরন্তন, তা হবেই, তা জগতের নিয়ম। এই নিয়মেই রয়েছে আনন্দ, রয়েছে শান্তি। তার বরখেলাপ তো হবার নয়। কাজেই ঝেড়ে উঠে নিজের যা কাজ, নিজের যা দেখা-একেবারে সব করে নিতে হবে।
= আমাদের শরীর বড় বিচিত্র। সেই বিচিত্রতার সম্মিলিত শক্তি এই আমি। "এই আমি" কে জাগিয়ে রাখতে শরীর অনেক বিচিত্র কাজ করে। এই কাজ তার আজকের নয়, লক্ষ বছর আগে থেকে করছে সে।
(০৬.০৮.২০২০)
ক'দিন বৃষ্টিস্নাত হয়েছ তুমি
তোমার শরীরে টলমল বৃষ্টি-ফোঁটা
আমি কাজ নিয়ে দেখতে পারিনি তোমায়
তুমিও আমায় দেখেছ কিনা জানিনা
তবে তোমার আর আমার মাঝে কারা
দুজনে কথা কয়েছে, হয়েছে আত্মহারা।
(০৮/০৮/২০২০)
এই যে আনন্দ একটুকরো
ঝিলিক দিয়ে ওঠে
এই যে খুশি এক চিলতে
ঠোঁটে ভেসে ওঠে,
এইতো তোমার পরশ পরম
পেলাম এই জন্মে।
#
ছোট ছোট হীরক বিন্দুর মধ্যে বড় এক ফোঁটা হীরক, অন্য দিকে আধ খাওয়া চাঁদ, মনিমুক্তোর আকাশ আজ। কদিন ধরে এক টানা বৃষ্টির পর মেঘমুক্ত আজ রাতের আকাশ। দেখে মুগদ্ধ হলাম। অবশ্য দিগন্তের ওপারে অদৃশ্য জায়গা থেকে বিদ্যুৎ চমকানো দেখা যায় মাঝে মাঝে। মানে, মেঘ উঠতে পারে।
(১২/০৮/২০২০; সন্ধ্যাকাল)
সন্ধ্যার শরীরে মুক্তির আরাম
ক্লান্তিধোয়া শান্তি
শতবর্ষ পরেও সন্ধ্যা
থাকে যেন এমনটি।।
# (১৮/০৮/২০২০)
প্রকৃতি পরিবর্তন চায়, সব গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন করে তৈরি করতে চায়। আমরা যতই ধরে রাখতে চাই না কেন, আমাদের শক্তি, সেও তো ওই প্রকৃতির দেওয়া।
(২০/০৮/২০২০)
# মানব চরিত্রের অভাগা দিক হল, নিজেকে বোঝাতে না পারার ব্যর্থতা। দুঃখ নেই, প্রকৃতি নিজেকে বোঝানোর এত চেষ্টা করে, তবুও পারেনা। যখন একটু একটু বুঝতে পারা যায়, ততক্ষণে সময় এসে তাকে পরিবর্তন করে ফেলে।
(২১/০৮/২০২০, সকাল ১১টা)
# আজ এই বৃষ্টি
খুলে দিল দৃষ্টি
যত স্বর্গীয় বাধা ছিল
স্বর্গীয় জলে ধুয়ে দিল।।
# (২৩/০৮/২০২)
= শক্তিই সময়।
= আজ মেঘলা বয়ানে দেখায় এই দিন,
অগোছালো দিনে আমার শখের আগামী দিন।
= হাতে নিয়ে হাতিয়ার
বৃষ্টি বলে হুঁশিয়ার
বিজলীর হাতিয়ার।
# (২৪/০৮/২০২০)
= বৃষ্টি হচ্ছে বিশ্রামের মতো। জীবন-জলের উপর প্রতিদিনের শ্যাওলা এসে জমলে, বৃষ্টি সেই শ্যাওলার তলের বস্তুর দিকে আমাদের দৃষ্টি নিক্ষেপের সুযোগ করে দেয়। বৃষ্টি তাই এক প্রকার মধুর আঘাতও।
# (২৬.০৮.২০২০)
= কবেকার সেই অন্ধকার যুগ, তার হাত ধরে সেই যে মহেঞ্জোদারো-হরোপ্পা, দ্রাবিড়, আর্য, মৌর্য, পাঠান, মোঘল, ইংরেজ হয়ে আজকের বর্তমান, সব মিলে-মিশে তৈরী করেছে একে। এ এক বহতা নদী। কুল ছেড়ে কুলে ভেড়ে। কেউ স্থায়ী নয়। অতীত চিরকাল অতীতের মতো, বর্তমান চিরকাল বর্তমানের মতো, ভবিষ্যত চিরকাল ভবিষ্যতের মতো। তুমি যদি অতীত,বর্তমান আর ভবিষ্যতকে জেনে যাও, তবে তো আর কিছুই থাকে না। সময় তো থমকে দাঁড়াবে, সৃষ্টি শেষ হয়ে যাবে। সে শক্তি তোমার না হওয়াই ভাল।
# (০২.০৯.২০২০)
কিছু রাস্তা নির্জন থাক
কিছু থাক হাঁটার
কিছু রাস্তায় শব্দ ব্যস্ত সংঘাত
তাতে কী আর করার।
# (০৫/০৯/২০২০)
আমরা ভেতরে দেখি না বলে বাইরের অদেখাই দেখি বেশি ।
# (০৭.০৯.২০২০)
নিবন্ধঃ অফিসের মানুষ
অফিস কাজের জায়গা। এখানে যাদেরকে আমরা চিনি, কাজ দিয়েই চিনি। কাজের বাইরের তাকে আমরা চিনিনা। কিন্তু একটা মানুষের অফিসের কাজের বাইরেও একটা জগত থাকে। তার আনন্দ, দুঃখ, বেদনা, ইচ্ছারাও সেই বহির্জগতের সাথে সম্পর্কিত। সে তার সেই সমগ্র নিয়ে অফিসে ঢুকতে পারে না। অফিস তাকে সে জায়গাও দেয় না। অফিস তার সবস্থান জুড়ে ব্যস্ত, ত্রস্ত, চাঞ্চল্য, গতি নিয়ে বসে আছে, সেখানে বাইরের আর কিছুকে জায়গা দেওয়ার মতো জায়গা তার কই? কাজেই একজন কর্মী তার একটা অংশকে বাইরে রেখে অফিসের কাজের গলিপথে ছোট হয়েই ঢোকে। আর ছোট হয়ে ঢোকে বলেই অফিস তাকে ছোট করে দেখে। বড় করে দেখতে পায় না।
অফিস তার কর্মীর ছোট রুপ দেখে বলে তাকে তাড়িয়ে বেড়ানোর ফন্দি করে। কারণ অফিস জানে, তার কর্মীর চালিকা শক্তি শুধু ওই ছোট অংশে নেই। বাইরের বিশাল অংশেও রয়েছে, কিন্তু ওখানে অফিসের হাত নেই। সে তাই বাইরে না গিয়ে বাইরের অংশটাও করায়ত্ব করার চেষ্টা করে। এখানে খুব ভদ্র দেখনাই একটা বুলি অফিস ছাড়ে। সে শুধু ব্যয়ের কথা বলে, আয়ের কথা কম বলে। ব্যয়ের কথা এত বেশি বলে যে, তার ভাবখানা এমন-শুধু ব্যয় করতেই অফিসের জন্ম হয়েছে, আয় আর কী! কর্মীদের বেতন দিতেই অফিসের জন্ম- কত মহত্বের কথা! সে তার আয়ের ব্যাপারটা লুকিয়ে রাখে। এতে করে সে কর্মীর মনে চাকরী চলে যাওয়ার ভীতি জাগাতে পারে। আর সেই ভয়ে কর্মীটি তার বাইরের বিশালের টান ছিন্ন করে অফিসের সরু পথে নিজেকে ছিন্ন-ভিন্ন করে ঢুকিয়ে দেয়। অফিস বাইরে না গিয়েও তার বাইরেটা কিনে নেয় এভাবে। এভাবেই অফিস শেষ পর্যন্ত অনৈতিকভাবে জয়ী হয়। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক অফিস, ব্যাংক- এসব স্থানে এ অবস্থা অতি প্রবল। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক অফিসে এ চিত্র অতি প্রবলতর।
এই যে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে সে ঢুকে পড়ে, এতে করে প্রথমে সে রক্তাক্ত হয়। তারপর সেই রক্তাক্তের যন্ত্রণা সহ্য করে করে সে হয়ে পড়ে সর্বসহা, সর্ববাধ্য। তার স্বাভাবিক ব্যক্তিত্বটি হারিয়ে যায়। যে ব্যক্তিত্বের মধ্যে পৃথিবীর কল্যান নিহিত থাকতে পারত, সেই ব্যক্তিত্ব হারিয়ে সে হয়ে পড়ে চমৎকার অফিসিয়াল, চমৎকার প্রফেশনাল। সে হতে পারে না চমৎকার মানুষ, কিংবা চমৎকার সামাজিক ব্যক্তিটি।
অফিস সর্বদা জয়ী হতে চায়, এই জয়ের অর্থও সে ভাল বোঝে না। সে সর্বদা ছুটতে চায়। কীভাবে কোন পথে ছুটতে হবে-তাও সে ভাল জানে না। সে জানে তাকে ছুটতেই হবে। কারও ঘর ভেঙে, কারও পথ আঁটকে তাকে ছুটতেই হবে। সে বলে- আমাকে থামিও না, ছোটাও, তুমি পড়ে গেছ গেছ, অন্যকে এনে দাও, আমাকে বহো। - এ এক সংস্কৃতি! সেদিন আমার এক কলিগ হঠাৎ মাথাঘুরে চেয়ার থেকে মেঝেতে পড়ে গেল, গিয়েই সে অজ্ঞান। দুএকজন হায়হায় করে তাকে কোলে করে তুলল। রেস্ট রুমে নিয়ে শুইয়ে দিল। তারপর দেখলাম সবাই আবার যে যার চেয়ারে বসে কাজে ব্যস্ত। যেন কিছুই হয়নি এ অফিসে। তার হাসপাতাল, তার চিকিৎসা-খুব সামান্যরাই ভেবেছে। সেই ভাবনাটাও আবার হারিয়ে গেছে কিছু পরে। কেন এমন হল? কারণ আমরা তো সেই কর্মীটির অন্তরকে চিনি না। সে আমাদের সাথে বাইশ বছর আছে, পাশাপাশি আছে, কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও আমরা তার ভেতরটা চিনতে পারিনি। ভেতর না চেনার কারণে তার ওপর আমাদের মায়া, মমতা ইত্যাদি জন্মেনি। অফিস তো ভেতরটা চেনায় না। সে চেনায় তার বাইরেটা, যে বাইরেটায় অফিসের প্রয়োজন আছে, সে বাইরেটাও সংক্ষিপ্ত। আমাদের আর দোষ কী! এখানে একটা কথা বলা দরকার, যদি অফিস প্রধান এভাবে পড়ে যায়, আর সে সময় অধস্তনদের মধ্যে যে অস্থিরতা ব্যতি-ব্যস্ত ভাব লক্ষিত হয়, অফিস প্রধান তা দেখে হয়ত ভাবতে পারেন- ‘কী আন্তরিক এরা!’ কিন্তু না। এ ভাবনা তার ভুল হবে। অফিস আন্তরিকতা শেখায় না। এটা উর্দ্ধতন-অধস্তনের কালচার, এখানে আছে ‘দেখানোর দৌড়’, সে দৌড় চেয়ার থেকে চেয়ারে, হৃদয় থেকে হৃদয়ে নয়। এ অবস্থা আমরাই তৈরী করেছি, কারণ অফিসিয়ালদের বাইরেটা মেরে তাদেরকে শুকিয়ে ফেলেছি। দু একজন মানুষ থাকে, যারা সত্যিকারভাবে এগিয়ে আসে। এ এগিয়ে আসার শিক্ষা তারা অফিস থেকে পায়নি, পেয়েছে পরিবার থেকে, সমাজ থেকে। তারা কোনক্রমেই অফিসের শিষ্ঠার কাছে নিজের জন্মগত শ্রেষ্ঠত্যকে বলি দেয়নি। আশ্চর্যের এই যে, শেষ পর্যন্ত এদের জন্যই অফিসের মুখ রক্ষা পায়।
আমরা যেটাকে কাজ বলি, আগে সেটাকে কাজ করে তুলতে হবে। তা নাহলে সেটা শুধু অকাজ হবে না, সেটা হবে অত্যাচার। একজন কর্মীকে কাজকে হৃদয়াঙ্গম করার শক্তি যোগাতে হবে। হৃদয় অযুক্ত কাজ অত্যাচার, তাতে কাজ যেটুকু হয়, অকাজ হয় বেশি। আমরা প্রায়ই পশ্চিমের অফিসের গপ্প করি। একথা ঠিক যে, আমাদের অফিস পশ্চিমরা সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা যা করতে পারেনি, আমরা শুধু সেটা না, তার এক কাটি ওপরে করার চেষ্টা করছি। এজন্য কর্পোরেট নামের এক মোয়া হাতে নিয়ে আমরা পাশ্চাত্যের লৌহ ঝনঝনে মেট্রো অফিসের গন্ধ শুকি। কিন্তু যে পাশ্চাত্য অতীতে নিরীহ কালো মানবদের নিরীহ রক্ত-মাংশের ওপর প্রভুত্বের পদাঘাত করে ভোগ ও পুঁজির লোভরাজ্যে প্রবেশ করেছিল, তার প্রকার পরিবর্তন হলেও লোভের পরিবর্তন হয়নি, বরং দিনে দিনে তা আরও বৃহত কলেবরে বেড়েছে। ছিন্নমুল ভ্যাগ্যান্বেসীরাই পাশ্চাত্যে অভিবাসী হয়েছে। তাই এই অভিবাসীদের সাথে তাদের না আছে আত্মার যোগ, না আছে সংস্কৃতির যোগ, না আছে হৃদয়ের যোগ। এই অভিবাসীরা কাজ পেয়ে তাদের সকল আশা পূর্ণ হয়েছে ভেবে সেই কাজেই নিজেদেরকে সঁপে দিয়েছে। তাদের জীবন নেই, জীবিকা আছে। আর কাজদাতারা এই অপরিচিত, অসীম কর্মস্পৃহদেরকে দিয়ে যা না তাই করিয়ে নিচ্ছে। কাজ পাওয়া এই হতভাগ্য, ভাগ্যান্বেসী অভিবাসীরা জীবিকার রসে শুকনো জীবন ভাসিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে। তারা না পারছে ডুবতে, না পারছে খাওয়ার মজা লুটতে, এক হাঁড়ি মধুতে একটা মৌমাছি পড়ে গেলে যেমন সাঁতার কাটে তেমন। কিন্তু আমরা তো আমরা আমরাই। আমাদের সেই অনাত্মীয় যোগ নেই, কিন্তু সেই লোভের আমদানী আছে। এই লোভই আমাদের মধ্যে জোর করে অনাত্মীয়যোগ ঘটাতে ব্যস্ত, এ থেকেই বৈষম্য, এ থেকেই মনুষত্বহীণ জাতির ভবিষ্যত তৈরী হচ্ছে।
--------------------------
== যে কথা কইতে পারেনা, তার কথা কওয়ার বাসনা বেশি। যে কথা কইতে পারে, সে অকথাই বেশি কয়, কথা খোঁজে সে যার বাসনাও আছে, আবার কথা কওয়ার সক্ষমতাও আছে।
# (০৮/০৯/২০২০)
তপস্যা করছে যেন আকাশ। রোদে পুড়ছে গাছের মাথা। সূর্যকে স্মরণ করছে আজ।
= খাওয়ানোর সুখ যে কখনও পায়নি, তার কাছে ভালো খাবার থাকলেও ভালো খাওয়া আশা করা যায় না।
# (০৯/০৯/২০২০)
এই যে অকারণ অযোগ
সম্পর্কের দৈন্যতা
এ আমার সৃষ্টি
আমাদের শূন্যতা।
# (১০/০৯/২০২০)
পরিবারের গন্ডগোল ততক্ষণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকে, যতক্ষণ বাইরেটা সেখানে মেশে না। বাইরেটা মিশে গেলে সে একেবারে জগাখিচুড়ি অবস্থা হয়। এ ভাবে ও অনুচিত কথা বলছে, ও ভাবে এ অনুচিত কথা বলছে। এই অনুচিত ভাবাভাবিতে কথাই শুধু ছোটে, মানুষ থেকে, আত্মীয়তা থেকে আমাদেরকে দূরে নিয়ে ফেলে। সে দূরত্ব বিষম। তাকে টেনে রাখা সাধ্য হলেও, সে তেমনি অনুচিত ভাবের বাতাসে মহাশক্তি পেয়ে ধরাছোঁয়ার বাইরে যায়।
পরিস্থিতিটাই যখন অনুচিত, সেখানে সবাই একে অন্যকে অনুচিত্যের মাপকাঠিতে মাপবে, সেটাই স্বাভাবিক।
# (১১/০৯/২০২০)
এই ছায়া এই বন
দেখি খুলে মন,
ছায়া আসে দেখা দিতে
দেখা দিয়ে যায় চলে
ভিজে আসে ভেজাতে
ভিজিয়ে যায় চলে।
আমি কী হে ভাই
আমিও তো যাই,
এসেছি আমি হয়ে
আমারে দেখাই,
যার আমি যার সে
তাহাতে মিলাই।
# (১২/০৯/২০২০)
প্রযুক্তিতে মিশেছে মানুষের নোংরামি। প্রযুক্তি একটা পথ, সেই পথ পেয়ে মানুষের মনের অপরিশীলিত, ভোগকাতর, গোপন ইচ্ছারা বিচিত্ররুপে ধেয়ে ছুটে আসছে। আজ খবরে দেখলাম, নগ্ন মহিলার ছবির ওপর একটা মেয়ের ছবি জুড়ে দিয়ে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে, তাই লজ্জা-অপমানে সেই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ আত্মহত্যা ওই মেয়েটির হলেও প্রকারান্তরে তা আমাদের সমাজের। প্রযুক্তির যথেচ্ছ ভড়ং সম্পর্কে এই অপরিপক্ক মানুষদের যদি বোঝানো যেত, তাহলে এ ঘটনা এড়ানো যেত। কিন্তু সে দায় তো প্রযুক্তিবিদ ও প্রযুক্তি ব্যবসায়ীদের।
আত্মহত্যা না করে প্রতিবাদ করার ক্ষমতা ওই মেয়েটির হল না। কেন হল না? কারণ তার প্রতিবাদ আমাদের প্রযুক্তিবোধশূণ্য মানুষের কাছে গ্রহণীয় হলেও, মনে মনে তারা এ নিয়ে একটা কৌতুক, একটা লোলুপতা অনুভব করে আড়ালে-আবডালে ফিসফিস করে যাবেই। মেয়েটি নিজের মনকে বোঝাতে পারবে, কিন্তু এদের বোঝাবে কীভাবে? এ শক্তি তার কতটুকু? তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধবরাই বা কতটুকু শক্তি যোগাবে? সকল পারিপার্শ্বিকতার মধ্যে সে এক অভিনব লজ্জা হয়েই পড়ে থাকবে। তার বিবাহ, যাকে সদগতি বলা যায়, তা এক ভিষণ বাঁধা পাবে। মনে এই সব আগপাছ উগড়ে উঠলে, চঞ্চল ও অভিমানে হয়ত মেয়েটি আত্মহত্যা করে জীবনকেই ছেড়ে দিল। তার মন প্রযুক্তির নোংরামির কাছে হেরে গেল। প্রযুক্তি মানুষের তৈরী, কিন্তু জীবন তো মানুষের তৈরী নয়, সে মানুষের দান। মানুষের তৈরী জিনিস যদি মানুষের দানকে কেড়ে নেয়, তবে তা বড় ভযংঙ্কর।
আত্মহত্যার কারণ যত বড় হোক, তা আত্মহত্যার চেয়ে বড় হতে পারেনা। নিজের সত্য অন্য কেউ না দেখুক, তা নিজের বড় শক্তি। নিজের সত্য নিয়ে বাইরের মিথ্যেকে প্রতিহত করতে শিখতে হবে। ঈশ্বর এই জীবন দিয়েছেন, জীবনের পরাজয় নিশ্চয়ই তিনি চান না, তাহলে আমি কেন চাইব? বরং জীবনকে দিয়ে জীবনের পরাজয়কে রুখব, ঈশ্বর তাতে সন্তুষ্ঠ হবেন। প্রযুক্তি নোংরামি গিলেছে, কিন্তু এমন শিক্ষা দেখানোর পথও যদি কেড়ে নেয় তবে তা ইমব্যালান্সড। তা উন্নয়ন আনতে পারে মঙ্গল নয়। আমারা উন্নয়ন ও মঙ্গল দুটোই চাই। মিথ্যা ছড়াতে মিথ্যার প্রয়োজন হয়, সত্য দিয়ে মিথ্যা ছড়ানো যায় না। মেয়েটির এডিটকরা ছবি ছড়িয়েছে মিথ্যাভাবে। এটা যারা না বুঝবে তারা মিথ্যা মানুষ, বা অজ্ঞ মানুষ। মিথ্যামানুষের সুদৃষ্টি পাওয়ার দরকার কী?
----------------
# (১৩/০৯/২০২০)
লেখা প্রকাশের আনন্দ যেন পণ্য-প্রসবের আনন্দ না হয়, তার উদযাপন যেন শুধুই পণ্য প্রসবের মোহ না জন্মিয়ে ফেলে, সত্যিকার আনন্দকে যেন সাহিত্য-বৃত্তের বাইরে না এনে ফেলে।
= পৃথিবীতে একদিন এমন এক বর্তমান আসবে, অতিতচারিতাই হবে তার চালিকা শক্তি।
# (১৫/০৯/২০২০)
তুলোর পাহাড় নীলের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়
পূব আকাশের সূর্য তারে সোনা দিয়ে রাঙায়
# (১৭/০৯/২০২০)
= কী ক্ষুধা দিয়েছ যে আমাকেই খেয়ে ফেলে
কী নকল দিয়েছ যে নকল গিলে ফেলে।
# ( ১৮/০৯/২০২০)
আমার সাধের জালে জড়াতে ইচ্ছে করে তোমাকে, যে সাধে সমাজের সাধ নেই, নেই সম্পর্কের। জানি সমাজ ও সম্পর্ক আমার সেই সাধকে স্বার্থপর করে রেখেছে।
# (২৪/০৯/২০২০)
দুর্মতি গেলে দুর্গতিও যাবে।
# (২৭/০৯/২০২০)
চাঁদে খাওয়া রাত
খেয়েছে আমায়ও
মন করে তোলপাড়
খেতে চায় সেও ও।
এ পৃথিবী নতুন হয়
এই চাঁদ মেখে
অদ্যিকাল দেখা দেয়
এই কাল ঢেকে।
# (২৮/০৯/২০২০)
যে পথ পায় না, সে কুপথে যায়। সাহিত্য পথ তৈরি করে। মানুষকে সুপথে নিতে পারে।
# (২৯/০৯/২০২০)
আমার বারান্দায় নিস্তব্ধ চেয়ারের পা ছুঁয়ে চাঁদের আলো পড়েছে। এ মুহূর্তে নিস্তব্ধতার চেয়ে বড় শক্তি আর কিছু নেই।
# (১০/১০/২০২০)
বাইরেটা যতই উন্মুক্ত হচ্ছে, ততই আমরা আত্মমুখী হচ্ছি। ২৪ ঘন্টা এরূপ চলতে থাকলে আমরা আত্মগহীনে ঢুকে যাব। তখন বাইরেটা আর আমাদের বের করতে পারবে না। তখন বাইরেটাও আমরা দেখব না। বুঝেও বুঝব না, শুনেও শুনব না। কাজেই "২৪ ঘন্টা একসেস" থিওরি একটু কাট-ছাঁট করা দরকার। বিশেষ করে ফেসবুকের ক্ষেত্রে।
# (১০/১০/২০২০)
তুমি কর খেলা
আমার খেলার জন্য খেলা
তোমার নির্মল আনন্দ
আমার আনন্দ ঢেলে আনন্দ
তোমার অঢেল সময়
আমি তোমার সময়ে বাধি আমার সময়।।
= রোদলাগা পাতায় চোখ রাখি
দেখি আমার ভেতরেও রোদ লেগেছে।
# (১৮/১০/২০২০)
= যার রেশ রয়েছে, সেই রেসের ওপর আবার যদি তার উৎসের শব্দ ঝংকার ধ্বনিত হয়, তবে খারাপ লাগে। রেশ কমে গেলেই কেবল তা মধুর লাগে।
# (২৮/১০/২০২০)
= জলের শিরায় জোছনালাগা
যেমন দেখায় রূপ
মিলিয়ে যাওয়ার আগে, তেমন
তোমার উদার উপস্থিতি
রাখল আভাস, রাখল স্মৃতি।।
(সে (তমালিকা) এসে হেসে সকলকে আপন করে নিজেকে উজাড় করে নিজের সুন্দর উপস্থিতি জানিয়ে গেল আজ)
# (৩১/১০/২০২০)
তোমার শাসনে শক্তি আছে
সততা নেই
তোমার শাসনে তোমার তৃপ্তি আছে
অন্যের নেই
তোমার শাসনে ভীতি আছে ভিত্তি নেই।
# (১৪/১১/২০২০)
ফুরায় যা তা লুকায় শুধু ফুরায় না তো সে
তারই আবেশ ফিরে আসে নতুন আবেশে।
# ( ২৮/১১/২০২০)
কোথাও পাব না এই রোদ
এই শীত আর ওমে মোড়া ঝলমলে সকাল
পাতায় খেলে যায় চিকচিক
ধোঁয়াশা জ্বালায় স্বপ্ন
রাস্তার বুকে ঝরে সুদূর
দিগন্তে গাছের রেখায় দাঁড়ানো আকাশ।
# (৩০/১২/২০২০)
-যার শ্রেষ্ঠত্ব গলাবাজির ওপর দাঁড়িয়ে,
তার মতো নিকৃষ্ট জগতে আর কেউ নেই।
- যে জ্ঞান শুধু দলে টানার জন্য, তার ভেতরটা চরমভাবে ফাঁপা।
# (০৬ / ০১ / ২০২১)
শীতের এই বিকেলে সূর্যের তেজ কম, সেই ঘাটতি খানিকটা পুষিয়ে নিচ্ছে হলদে-বাদামী অপরুপ এক রঙ ঢেলে দিয়ে। সন্ধ্যা আসতে গিয়েও যেন থমকে দাঁড়িয়ে আছে এই অপরুপ রঙ দেখে। সাতক্ষীরা, আমার শহর; আমার শহরে এখন এই রঙ লেগেছে।
# (০৮/০১/২০২১)
যে মুগধ হতে শেখেনি, সে অন্যকে মুগধ করতে পারেন।
# ( ০৯/০১/২০২১)
যে আনন্দ দিলে আমায়
শেষতক সে তোমার,
যে দুঃখ দিলে আমায়
শেষতক সে তোমার,
আমার মধ্যে ধরিয়েছিলে
তুমি হয়ে দেখিয়েছিলে
তাই তো তুমি সবার।।
= তুমি আমায় জাগিয়েছিলে সোনার রোদেতে
তাইতো আমি মেলাই কন্ঠ তোমার গানেতে
তোমার রঙে রাঙাব যে আমার সকল আঁকা
তোমার দেখায় দেখব যে আমার সকল দেখা
রোদের পারের তুমি এসে দেখবে দেখাতে।।
এই যে ঝরা পাতার ওপর রোদের ভালবাসা
এই যে নতুন কুঁড়ির ওপর রোদের মায়ালাগা
এই যে শীতের সহা সকাল পাখির কাকলী
এই যে পাতার শীরায় শীরায় সুখের লহরী
মুগ্ধ আমি চেয়ে থাকি তোমার চাওয়াতে।।
# (১০/০১/২০২১)
যারা ভাঙনের মধ্যে থাকে, গড়ন জিনিসটা তারা দেখতেই পায় না।
# (১৩/০১/২০২১)
মানুষ তার কিছু রেখে যায় ভাষায়, যা রাখেনা, সেও ভাষায়। মানুষের স্বাচ্ছন্দ্য ভাষাতেই। অর্থ বলো, বিত্ত বলো, ভাষার স্বাচ্ছন্দ্য যদি না থাকে, ওসবের স্বাচ্ছন্দ্য অর্থহীন।
# (১৬/০১/২০২১)
ছায়া পড়েছে বিকেলে
রোদের গায়ে শীত
পুকুরে ঝরা পাতার
গন্ধ গায় গীত।
-
ধূসর শীতের সূর্য্য
মুখ তুলে হাসে
ডুব ডুব দিনখানি
চোখে লেগে আসে।।
--
ঝরুক তোমার আশীষ
ঝরুক জোছনা রাতে
আঁধার শীতল বনতলে
ঝরুক ঘাসের পাতে।।
# (২১.০১.২০২১)
মনে বাসনা পুষে
মুখে তা তাড়ানোর কথা ঠিক ফোঁটে না,
সে জ্ঞান আসে না
সে ভাষা জন্মে না।
= পাই জেনে দূরে ঠেলেছি
জানিনি,
নিজেকেই দূর করেছি।
# যন্ত্র আমাদের কাছে রাখে বলে
কাছে যাওয়ার সুখটা পাইনা।
# প্রয়োজের জন্য যন্ত্র তৈরি কোরো
যন্ত্রের জন্য প্রয়োজন তৈরি কোরো না।
# (২৩/০১/২০২১)
চাঁদ দূরের জন্য, কাছের জন্য নয়।
# (২৪.০১.২০২১)
কুয়াশায় মুড়ে আছে
সারা চরাচর
ভাবাচ্ছে আমায় তা
এই সকালভর
মুখ ঢেকে পৃথিবীটা
করছে কী
গাছ ছিল ওখানে
সেটা আছে কি?
ওইখানের মাঠটা
তার কী হল?
পুকুরটা ওইখানের
কোথায় হারাল?
# (২৭/০১/২০২১)
সৃষ্টিই সৃষ্টিকে রক্ষা করে। সৃষ্টি যা ধ্বংস করে, তাও সৃষ্টির লক্ষ্যে।
# (৩১/০১/২০২১)
আমি পালাতে ভালবাসি
বাধাধরার বন-জঙ্গল থেকে
স্বাধীনতার খেতে।
# ( ০১/০২/২০২১)
গাছের পরে গাছের রেখা
দিগন্তে দাঁড়ায় থমকে
কুয়াশাফুঁড়ে দেখে সে আমায়
চোখ যে দাঁড়ায় চমকে।
# (০২/০২/২০২১)
কিছু কিছু গল্প বা উপন্যাস এখন হচ্ছে, যেগুলোকে কথাসাহিত্যের তকমা লাগানো হয়। সচারাচর দেখা পথের মধ্যে অনেক অদেখা পথ সেখানে রয়েছে, পড়তে ভালই লাগে। কিন্ত দেখাতে দেখাতে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, এক পর্যায়ে বড় ফাঁকা লাগে, অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। লেখক এখানে খেই হারিয়ে ফেলে। আসলে আমাদের এখনকার গদ্য লেখকদের উপর ভুলভাবে ভর করেছে মার্কেজের নিঃসঙ্গতার একশ বছর উপন্যাসটির রচনা শৈলী। সে উপন্যাস-গৃহটি যে ইটে তৈরী, আর তার ফাঁকফোকর যে মসলা দিয়ে আঁটা, এরা সেই মসলা নিয়ে বসেছে, ইটটি এদের নেই। কাজেই শুধু মসলাই দেখি, শক্ত পাকাপোক্ত কোন স্থাপনা দেখা যায় না।
# (০৩/০২/২০২১)
শুষ্ক মরুতে ফুল ফোটানোই শিল্পীর কাজ। তিনি শূন্য থেকে পূর্ণ সৃষ্টি করেন। নিজের রস ঢেলে তিনি অন্যকে ভেজান। তিনি কখনও শুকিয়ে যেতে পারেন না।
# (১৭/০২/২০২১)
আমার জন্য জাগেন তিনি নিত্য নিরন্তর
আমার তিনি ভরসা আমার জীবন তোলা ঘর।
# (২০/০২/২০২১)
জীবনের বিষ হজম করার জন্য দরকার যে জ্ঞানের শক্তি, তা কুড়াতে ও বিলোতে আমি লিখি।
# (২১/০২/২০২১)
গন্ধ শুকনো বসন্ত বেলা। মাঝে মাঝে খসখসে হাওয়া গায়ে লাগিয়ে রৌদ্রমগন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বাগানখানি। বুকের মাঝে তার পাখির ডাক, পতঙ্গের ওড়া-ওড়ি, শুকনো পাতার মচমচানি। এতদিন যেন শীত তার বাহুতে চেপে রেখেছিল সমস্ত জীবন, শীত সেই বাঁধন আলগা করতেই হাফ ছেড়ে নড়ে চড়ে উঠছে জীবন। তাই এত শব্দ, এত চঞ্চলতা― মরা পাতাতেও স্পন্দন।
এই যে লেবু ফুলের গন্ধ, আমের বোলের গন্ধ, শুকনো পাতার গন্ধ―ঢালছে বসন্ত, সেই গন্ধে লুকিয়ে মিশেছে ব্রহ্মান্ডের গন্ধ। কেননা বহু যুগের সাধনায় ব্রহ্মান্ড যে জীবনের ফুল ফুটিয়েছে, ছোট্ট এই পৃথিবীর ছোট্ট এই কোণে তারই গন্ধ ছুটছে আজ বসন্তে।
# (২৫/০২/২০২১)
চাপ ছিল। ভেবে কুল পাইনা, কীভাবে এই চাপ সামলাব। অস্বস্তিতে চঞ্চল হয়ে উঠি। মনস্থির করে ভাবি। কীভাবে কীকরে চাপটা দু একদিনের জন্য আলগা হল। তখন যে স্বস্তিটা পেলাম, এই স্বস্তির আনন্দ উপভোগও জীবনের এক দান। এও যে বিধাতার কাছ থেকে এল। এল আমার পরম করুণাময় মা কালীর নিকট থেকে। কিন্তু এই আনন্দে আবেগ ঢাললে ঝামেলা। আবেগে ভোগ করা যায়, কিন্তু বোধ করা যায় না।
# (২৬/০২/২০২১)
কিছু সুন্দর আছে, ফুলের মতো, তাকিয়ে থাকা যায়। কিছু সুন্দর আছে, সূর্যের মতো, তাকাতে গেলে চোখ ধাঁধিয়ে আসে।
# (০৯/০৩/২০২১)
মানুষের সেবা যত বেড়েছে, তত তার অসম্মানও বেড়েছে। সেবা, যা অর্থনীতির একটা খাত হয়েছে, তাতে শুধু আছে অর্থ, তা শুধু অর্থ দিয়েই মানুষকে বিচার করতে শিখিয়েছে। মানুষের মানবিক শক্তি, শিক্ষা ও সম্মানের শক্তি ক্রমেই তার কাছে মূল্যহীন হয়ে পড়ছে। এই ব্যবসা সফল নবীন বোধ সমাজে একরোখা কুৎসিত চরিত্রের দলকেই ভারী করে চলেছে। এখানে প্রকৃত মুক্তির ও শান্তির বীজ যারা বপন করবে, তাদের দাঁড়াবার ঠাঁই কোথায়? এটা দেখা যাচ্ছে, সেই সামন্ত আমলের, জমিদারি আমলের, নীলচাষ আমলেরই এক নবসংস্করণ। কে বলতে পারে আমরা এগিয়েছি?
যে সেবার মধ্যে অর্থও আছে, আবার অন্তরও আছে―সেই প্রকৃত সেবা। আমাদের সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস ও লক্ষ্যকে থিতিয়ে দিয়ে কিছু সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান তাদের ভেতরে এমন এক কালচার গড়ে তুলছে, নিজেদের কাজ হাসিলের জন্য রাষ্ট্রের চোখের সামনে তারা এমন পদক্ষেপ নেয়, যা প্রকারান্তরে দেশছাড়া করার সামিল। সমাজ ও রাষ্ট্রে অনেক প্রতিষ্ঠান থাকবে। তার মধ্যে একটি প্রতিষ্ঠান এমন শক্তি ও সাহস পায় কী করে? এটাকে আমি "প্রতিষ্ঠান স্বাতন্ত্রবাদ" হিসেবে আখ্যায়িত করি। উন্নাসিক ব্যক্তিস্বাতন্ত্রে মদদদাতা অধুনা পুঁজিবাদের একটা ভীষন নখর হয়ে উঠছে এই প্রতিষ্ঠানস্বাতন্ত্রবাদ। এ এমন কী গর্ভের শিশুর গায়েও নখ বসাচ্ছে (আমরা দেখেছি এনজিও লোনের কিস্তি না দিতে পারায় গর্ভবতী ও শিশুসহ মাকে কারাগারে বসত করতে হয়েছে)। এই শিশু ভূমিষ্ঠ হয়ে সেই নখরে সাড়া দিতে দাঁত আস্ফালনই করে যাবে। কী ভয়ানক ডিসটোপিয়া যুগের শুরু করছি আমরা।
প্রতিষ্ঠানে যতটা কাজের চর্চা হয়, ততটা নীতি ও উদ্দেশ্যের চর্চা হয় না। নীতি ও উদ্দেশ্য অচর্চিত থাকে বলে, কাজের নিত্য কচকচানি মুনাফাকেই তার একমাত্র উদ্দেশ্য বানিয়ে ফেলে। অতি মুনাফাতেই যেন তার অস্তিত্ব, অন্যের অস্তিত্বে তার অস্তিত্ব যে দৃশ্যমান হয়―এ কথা বোঝাবে কে?
(২০/০৩/২০২১)
আঁধার যেন গোপন করে রেখেছে কিছু, মায়াবী কিছু―দেখেও দেখা যাচ্ছে না, ধরেও ধরা যাচ্ছে না, ছুঁইয়েও ছোঁয়া যাচ্ছে না―ঠিক এমন এক আধাঁর ঢেলে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়েছে ষষ্ঠীর চাঁদ। আকাশে মুক্তদানার মত দুয়েকটি তারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। উঠোনে চৈত্রের পরশ মেখে ছড়িয়ে রয়েছে শুকনো পাতা, আমের বোল। টক টক করে দূরের কোনো গাছ থেকে পাখির ডাক ভেসে আসে। খুব নিবিষ্ট নিম্ন লয়ে ঘুগরো পোকা ডেকে চলে। এই আমাদের গ্রাম, আমাদের দক্ষিনশ্রীপুর গ্রাম।
# (০২/০৪/২০২১)
এখনও একটা অনুভূতির জন্য মৃদু বাতাস ওঠে
অনুভূতিই তাকে সৃষ্টি করে
প্রকৃতি স্বস্তি পায়।
মিথ্যার বেসাতি মায়ায় সেই অনুভূতির ঘরটি যদি তুমি বন্ধ কর
প্রকৃতিই তোমার প্রতিশোধ নেবে
ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
# (০৪/০৪/২০২১)
চৈত্রের বাতাসে
ভেসে ভেসে আসে
বহু দূরের কোন সুর
শুনি কিছু কিছু
মনে কান পেতে
মনে হয় আমি এক দূর।।
# ( ১৩/০৪/২০২১)
ব্যর্থ হবে তাই চেষ্টা করবে না―এই মানসিকতা বাদ দাও। চেষ্টা করে ব্যর্থ হও। ব্যর্থ চেষ্টাও পুকুরে ঢিল পড়ার মতো ঢেউ ফেলে যায় জগতের শরীরে।
# (১৫ এপ্রিল রাত ১.৫ টা)
এখন রাত্রি নিঝুম। লকডাউনের চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমুচ্ছে শহর। কোনো শব্দ নেই, কোথাও কেউ নেই। মনে হচ্ছে এই সাতক্ষীরা শহরটা হঠাৎ যেন আমাদের বারুনী বিলে এসে পড়েছে। সব কিছু আছে―রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠা, শুধু মানুষ নেই।
# ( ১৫/০৪/২০২১)
একটা ফুলের বাগান আছে, মঙ্গলফুলের বাগান। ঈশ্বরের বুকে সেই বাগান। সেখান থেকে মঙ্গলশক্তির গন্ধ ছোটে। তা আমার কাছে আসে, আমার বাবার গা থেকে।
# (১৭/০৪/২০২১)
নিচে দুশ্চিন্তার কুমিরেরা খুবলাচ্ছে, ওপরে চলছে আমার সৃষ্টিচিন্তার নৌকাটি। ধাক্কা খাচ্ছে, অধীর হচ্ছে। তবু এভাবেই চলতে হবে জানি। আপদহীন গাঙে পড়ার আশা কখনও ছাড়ি না।
= আমায় স্থিরতা দাও
আমায় স্বস্তি দাও
এ মাটি যা বলছে
সেই কথা বলতে দাও
এ বাতাস যা গাইছে
সেই গান শুনতে দাও
এ আকাশ যা দেখায়
সেই দৃশ্য দেখতে দাও।
আমায় স্থিরতা দাও
আমায় স্বস্তি দাও।।
# ১৮/০৪/২০২১)
ক্ষমা চাওয়ার মতো শান্তি খুব কম আছে। আমি মনে করি, ক্ষমা চাওয়া ততটাই ভারী গুণ, যতটা ভারী দোষ ঘটে কোনো অপরাধ করাতে। নিজের বিবেকের কাছে, নিজের ঈশ্বরের কাছে ক্ষমা চাইলে চিত্তের শুদ্ধতা ঘটে।
# ( ২৩/০৪/২০২১)
–তুমি আমায় তাড়িয়ে দিয়েছ বহু আগে
আমি তাড়াইনি
তাই তাড়া খাই পদে পদে
আগে বুঝিনি।।
– ভরা নদীর ঢেউয়ের মতো
বেদনার ঢেউ খেলে করে
আমার ভেতরে।।
# (২৫/০৪/২০২১)
পথ জানে না এ জাতি আজ দিশেহারা
ক্ষমা করো হে প্রভু বাঁচাও এ প্রানের ধারা
সন্তান মরে আছে পায়ের কাছে অকালে
আতঙ্কে শুকয় মায়ের শোক কী কাল দেখালে।।
# (২৭/০৪/২০২১)
-আমার চারদিকে অস্বস্তির মরু। এক ফোঁটা স্বস্তির জন্য আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। আমাকে একগ্লাস স্বস্তিরস দিন।
- ঋণের সুদকে আমি আর সুদ বলিনা, বলি স্বস্তিমূল্য। আমাকে স্বস্তি কিনতে হয়।
= নিজের অসহায়ত্বের সময় নিজেরই পাশে দাঁড়াতে পারিনা। এই না দাঁড়ানোটা এক ধরনের নিঠুরতা। নিজেকে যেন আর নিঠুর না হতে হয়, সম্ভবত সে জন্যই এ নিঠুরতাকে চিনিয়ে দিল সময়।
# ( ২৯/০৪/২০৩১)
প্রকৃতি সব জানে। তার সাথে সংযোগ না হলে তুমি সব জানবে কী করে?
# ( ৩০/০৪/২০২১)
কী অপূর্ব জোছনা, আমার জানলায়-দরজায়। মধ্যরাত। নিস্তব্ধ চারদিক। ফ্যানের শব্দ হচ্ছে শুধু। ঘরে ঢুকে পড়া এই জোছনার সাথে বসে আছি। মনে হচ্ছে অন্য কোথাও আছি।
# (০৩/০৪/২০২১)
ধর্মের ব্যবহারটা হয়েছে শুধু ভাগ করতে, যোগ করতে নয়।
# (১১/০৫/২০২১)
এই সকালে , এখন―
ঝমঝম বৃষ্টি ঘনঘন দেয়া
এই পড়ে এই পড়ে
ভয়ে কাঁপে হিয়া।।
# ( ১৪/০৫/২০২১)
প্রতাপাদিত্যের ইতিহাস
লুকিয়ে আছে এই মাটিতে
এই মনে হয় এখানে
আবার মনে হয় ঐখানে
সত্য কী তা
ইতিহাসই জানে।।
# (৩০/০৫/২০২১)
আমার ভয় লাগলেও, পৃথিবী ভয়ংকর নয়। আনন্দ সৃজনে পরাভূত হোক সকল ভয়। ভয় নিরানন্দেরই আঁতাতে তৈরি।
# (৩১/০৫/২০২১–সাতক্ষীরা)
সকালে ঘুম ভাঙল বৃষ্টির শব্দে। চারদিক মেঘ জড়ো হয়ে আকাশ ছেয়ে ফেলেছে কখন, কলকল বৃষ্টি নামাচ্ছে। ঘুর্ণি ঝড় "ইয়াস" এর কারণে কদিন আগে বৃষ্টি হয়েছিল, তারই প্রভাবে মেঘ এসে চলে যেত, দুদিন আর মেঘ ছিল না আকাশে। গরম পড়েছিল খুব। বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনাও ছিল না। হঠাৎ এই বৃষ্টি তাই আনন্দের চমক। বিছানায় বসে আছি, দক্ষিণের জানলা দিয়ে অন্য বিল্ডিংয়ের ছাদ দেখা যায়, সেই ছাদে, রেলিঙে, ব্যালকনিতে বৃষ্টি পড়ার শব্দ শুনছি, গাছের মাথাদোলা দেখছি, মাঝে মাঝে শীতল ঝটকা জানলা দিয়ে ঘরে ঢুকে আমার গায়ে ফুটছে। রেলিংয়ের শিক থেকে শিকে বরফ কুচির মতো বৃষ্টির ফোঁটা তৈরি হয়ে আবার মিলিয়ে যাচ্ছে।
# (০৩/০৬/২০২১)
আকাশের সব জায়গায় তো একই রকম সূর্যালোক থাকেনা সব সময়। আমার আকশে কখনও কখনও অশান্তি আর অপমানের মেঘ জমে। আমি সেগুলোকে ক্ষীণ মেঘরেখার মতো দেখি। তা কখনও আমার বিশালত্বকে ছেয়ে ফেলতে পারেনা।
# (০৭/০৬/২০২১)
হে বিধাতা, তুমি তো আমার হাত দিয়েই দেখাও তোমার ভেতর। তাই জানি আমি। আমার যত আবিষ্কার―তোমায় দেখানোর জন্যই। তুমি ছলনা করবে না জানি।
= পৃথিবী সুন্দর, শেষ বেলায়ও যেন বলে যেতে পারি।
# (২৪/০৬/২০২১)
সামনের অন্ধকার থেকে একটা বিল্ডিং উঠে দাঁড়িয়েছে। ঠিক তার গায়ে মধ্যাকাশের বড় গোল চাঁদ আলো ঢেলে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে তাদের দূরত্ব কম, যেন মায়ের পাশে সন্তান দাঁড়িয়ে আছে।
চারতলার ব্যালনকিতে দাঁড়িয়ে আছি। দক্ষিণ থেকে ফিরফিরে হাওয়া ছুটছে। নীচে নিস্তব্ধ শহর, ফ্যাকাশে অন্ধকার জমে আছে।
জুনের এই শেষ দিকে আকাশকে খুব কাছে মনে হয়। সবার কাছে কিনা জানিনা, আমার কাছে হয়। এমনকি এও মনে হয়, আরেকটু হাত উঁচু করলেই আকাশ ছুঁতে পারব।
জুলিয়াস লং এর "The Pale Man" এর বঙ্গানুবাদ করছি। প্রথম বারের মতো একেবারে অনভ্যস্ত, অপরিচিত ভাষারূপ থেকে আমার নিজের ভাষায় রূপান্তর করতে গিয়ে বুঝেছি, সেই সময় লেখক যা ভেবেছেন, আমাকেও তাই ভাবতে হচ্ছে। অর্থ্যাৎ, আমি বাদ, লং এখন বাংলায় লিখছেন। কারণ আমি সংগৎকারনে ওই ভাষার প্রকাশ প্রক্রিয়া আত্মগত করতে পারিনি। তাই আমাকে খুব ভাবতে হচ্ছে। এত ভাবনা যেখানে, সেটাকে রূপান্তর বলি কেমন করে, তা তো আস্ত একটা লেখনি। আসলে অনুবাদ সাহিত্য আস্ত আরেকখানা লেখনি। একই জিনিষ দুই পাত্রে রাখা, একজন নয়, দুইজন রাখছেন।
# (৩০/০৬/২০২১)
মেঘলা হাওয়া, বৃষ্টির গন্ধ
দায়ের চাপ, তবু আনন্দ।
# (৩০/০৬/২০২১)
তাহার অনন্ত চলিছে ছুটিয়া
আমরা চিহ্ন, ঝরেছি লুটিয়া।
# (০৭/০৭/২০২১)
বর্ষা নামল ধীরে,
খোঁপার গহীনে গোপন কালোর মত―
ছায়া, ভেজা―মিষ্টি―কালো ছায়া
নেশার মতো ক্ষণিক
বসল ঘিরে
পাতার ভেতরে।
********
বৃষ্টি এল ঝড় তুলে
ছায়ার কুলে বজ্র খুলে
সাঁ সাঁ সাঁ সাঁ সাঁ।
পায়ে তাহার শব্দ বাহার
সুরে যাহার হ সাবাড়
সকল শব্দ ধরণীর
যা যা যা যা যা।।
*****
# ( ১৮/০৭/২০২১)
= জীবিত যে, তার নিজস্ব স্বাদ রয়েছে। যখন মৃত্যু ঘটে, সকলের স্বাদ তার হয়ে যায়। কাজেই তার জন্য দুঃখের কী আছে? আমার কাছে মৃত্যু মানে অন্ধকারময় জীবন। জগতে অন্ধকারই বেশি, আলো আর কতটুকু?
= তিনি এখন নেই, আগেও ছিলেন না, মাঝে ছিলেন-তিনটেই সত্য। মাঝের থাকাটা জীবন। তাকে হারানোয় আমাদের যে শোক, তা সম্পর্কগত। তার সাথে প্রকৃতির নিয়মের সম্পর্ক রয়েছে। সেটাই শেষতক বোঝা যায়। মাঝের যে জীবন, আমি তাকে বুঝি যে সে শুধু এই পৃথিবীর নয়, তা ব্রহ্মাণ্ডের সুদূর কোণের গ্রহ-নক্ষত্রেরও। টর্চের সুইচ টিপলে যেমন আলো পড়ে, আবার সুইচ ছেড়ে দিলে আলো গুটিয়ে যায়-জীবন তেমনি। মাঝে জীবনের মধ্যে দিয়ে আমরা ব্রহ্মাণ্ডের বিচিত্ররূপটা দেখি। যেখানে এর উৎপত্তি, সেই জননী। প্রকৃতিতে এর উৎপত্তি, কাজেই প্রকৃতি আমাদের কাছে মা।
# (২২/০৭/২০২১)
কায়াটা মনে, ছায়াটা বনে; এ দৃশ্য বৃষ্টিদিনে।
# ( ২৭/০৭/২০২১)
ঘন ঘাতে বৃষ্টি
ঘন ঘন দেয়া
চঞ্চল মন আজি
কম্পিত হীয়া।।
নামছে ফুসিয়া
দম্ভে ঝাঁপিয়া
এই বুঝি সব শেষ
সৃষ্টির যত লেশ
নেবে বুঝি লুটিয়া।।
সৃষ্টির মহাতাল
যা ছিল এতকাল
ভাঙিল ছন্দ
নেই কোনো দ্বন্দ্ব
জীবনে মরনে
প্রলয়ে সৃজনে
দিয়ে গেল সেই রায়।।
# (২৮/০৭/২০২১)
ঝরঝর বৃষ্টি। রাত গভীর। বিদ্যুৎ নেই। অন্ধকারে নিমজ্জিত পৃথিবী বৃষ্টিতে ডুবছে।
# (৩০/০৭/২০২১)
যে ঘাসের ডগাটিকে অর্থ দিয়ে রেখেছে প্রকৃতি, তুমি টাকার হাতে তার অর্থ তুলে দিলে। দিতে কি পেরেছ? তার অর্থ শুধু তোমার কাছে নয়, তা বিশ্বময়। তোমার যেটুকু শুধু তাই দিতে পেরেছ, আর বিশ্বময়কে করেছ বঞ্চিত। তুমি আস্ত থাকবে ভেবেছ?
# (১৭/০৮/২০২১)
এই যে সকালে মেঘ আর হওয়ার খেলা আকাশ রাজ্যে, গত রাত দেড়টায় এমন ছিল না। তখন চাঁদ ঝলসানো নীল আকাশে একটুখানি জায়গায় ছিল তুলোর মতো নিশ্চল সাদা মেঘ। বুঝেছি, শরৎ নামছিল ওই স্বর্গ থেকে। এবার শরৎ আসবে জীবনের সকল মলিনতা ধুয়ে দিতে। পরিষ্কার করে দেবে যত কূট জীবাণু।
# ( ১৮/০৮/২০২১)
যারা গাল টিপে খায়, তারা মৃত্যুকালে গালে একফোঁটা জল দেবেনা ―এটাই স্বাভাবিক।
# (২২/০৮/২০২১)
শরৎ ঢালছে শুভ্রতা
# (২৫/০৮/২০২১)
যে চিন্তা নিজেকে দুর্বল করে তা সবচেয়ে বাজে চিন্তা। তা পরিহার করা আবশ্যক।
# (২৬/০৮/২০২১)
যত সৃষ্টি করবে, তত স্থিত হবে।
পুরাতন কখনও নতুনের ওপর বসতে পারেনা, পুরাতন পুরাতনই।
# (৩১/০৮/২০২১)
শরৎ রোদে
শুকনো পথে
পাতার ছায়া,
তাতে বড় মায়া।
চুপ পাতা
কয় কথা
নতুন বোধে,
রোদের সাথে।
# (৪.৯.২০২১)
আমার বাড়িতে আজ আলোর উৎসব
মা কালীর কৃপায় ঘটল এসব
মনোজগতে আমি দেখেছিলাম যা
বাস্তবে ঠিক আজ দেখলাম তা।
# (৫/০৯/২০২১)
যে গতি মানব জীবনকে বেগতিক করে তোলে, তা অচিরেই থমকে ভেঙে চুরমার হয়ে ছড়িয়ে পড়বে। : প্রসঙ্গ ―আফগানিস্তানে তালিবানের ক্ষমতা দখল)
#
নতুন আলোক লাগল পাতায়
শরৎ ভোরে
তাই দেখে চোখ স্নিগদ্ধ হল
ভালোর ঘোরে।
শিশির যেমন রৌদ্র বুকে
হাসে হাসে হাসে
তেমনি ভালোয় চোখ দুটো আজ
ভাসে ভাসে ভাসে।
(৫/০৯/২০২১)
# (৮/০৯/২০২১)
প্রকৃতির কোনো স্মৃতি
দোলায় যদি মন
ভাববে, তুমি ভাগ্যবান
তার যজ্ঞের তুমি হাতিয়ার
দেদীপ্যমান।
# (২০/০৯/২০২১)
আজ কাঁদছে আকাশ,
কার অসুখে
বইছে করুণ বাতাস।
গভীর অসুখ কার শরীরে
মেলছে মুখ ধীরে ধীরে
আমার আবাস ঘীরে,
# (২১/০৯/২০২১)
ভয়কে যে জয় করতে পারে, সে-ই প্রকৃত জয়ী।
#)
আমার সময়টি এখন সরু সুতোর মতো একটি পথ পার হওয়ার জন্য। আমার আর কোন সময় নেই। অনেকগুলো সমস্যা আমার পথটিকে অমন করেছে, সেই সমস্যাদের টানে আমাকে চলতে হয়। পা হড়কে গেলে বিপদ। কিন্তু আমি প্রসস্ত পথের কথা বলতে পারি। বলতে পারি, পথ চওড়া করতে চাই, সুন্দর পৃথিবী বানাতে চাই। বর্তমানরা সেসব শুনবে না জানি। যার নিজের পথ নাই, সে অন্যের জন্য পথ বানাবে- এ শুধু হাসির খোরাক জোগায়। তাই আমার টার্গেট বর্তমানকে নয়, আগামীকে।
আগামীতে একজন সরু পথের সময়হীন পথিক আমার মতো বললে, তখনকার পৃথিবী তার কথাও শুনবে না। কিন্তু অতীত হয়ে যাওয়া আমার কথা শুনবে। যদিও আগামীর সেই সরু সুতোর পথিকটিও আমার মতোই, বলা যায় আমি-ই।
# ১০/১০/২০২১
যে ভরসা যোগায়, সে ভরসা না পেলেও তাকে তা যোগাতেই হয়।
# ( ১১/১০/২০২১)
= পৃথিবীও মরবে, কারণ সে জীবন্ত।
= আমরা যে পৃথিবীতে প্রথমবার এসেছি তা বলি কেমন করে? কোথাও ডাল ভেঙে গেলে প্রাণ-পাখিটা আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে। শুধু পারিনা সেই সময়টা মনে করতে। কিন্তু প্রাণ-পাখি তা জানে।
# (১১/১০/২০২১)
পেয়েছি অপার প্রাণ
তাই করে যাব দান
প্রাণেতে প্রাণেতে,
উঠবে জেগে
সময়ের ত্রাণ।
# (১৩/১০/২০২১)
আজ বৃষ্টি হওয়ার কথা
তবু আকাশ নীল
জানি এ শরৎ এসেছে স্বর্গ হতে
আবহাওয়ার অনুমানে থাকবে না মিল।।
# (১৭/১০/২০২১)
মেঘ করে বৃষ্টি এল। সাথে দমকা হাওয়া, মৃদু-মন্দ বজ্রহাকুনি। দূরে গাছগুলোর মাথা দেখতে দেখতে বৃষ্টি-ধূসর হয়ে গেল। ঠিক যেন আষাঢ় মাস।
# (১৮/১০/২০২১)
অন্যের ধর্মবিশ্বাসকে অপছন্দ করা মানে নিজের ধর্মবিশ্বাসকে অপছন্দে ফেলা।
এরা স্রষ্টার কাছে পৌঁছানোর পথ নিয়ে ব্যস্ত বলে পথেই জীবন কেটে যায়, পৌঁছানো আর হয় না।
ধর্মীয়সংখ্যাগুরুর হাতেই সংখ্যালঘুর সম্মান ও অপমান।
# (১৯/১০/২০২১)
বৃষ্টিমাখা হেমন্ত
বেরিয়ে এল বৃষ্টি-ছায়ায়
কমলা রোদ আর কুয়াসা
ও ভাই
লুকালো সব কোথায়?
= হেমন্ত বেড়াতে এল বষ্টির কোট গায়ে। তাকে চেনাই যায় না। সাথে নেই সেই কমলা রোদ, সেই খেজুর গাছের শুকনো মাথা, নেই সেই কুয়াসানামা দিগন্তের ধুসরতা, সেই ঢেলাক্ষেতের পেঁচার কিচিরমিচির। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেন গো এমন?’ সে বলল, ‘ চেনা বেশে তোমাদের মন যায় না, তাই সাজে একটু আলাদা হলাম, যাতে আগের সাজটার প্রতি তোমাদের ভালবাসা জন্মে।’
# (২১/১০/২০২১)
একমাস বৃষ্টি-কান্নার পর আজ আকাশ থেমেছে। হেমন্ত-সন্ধ্যায় আজ পশ্চিম আকাশে শুকতারা, পুব আকাশে লালচে গোল চাঁদ; যেন দুটি চোখ। কেঁদে কেঁদে একটি চোখ ছোট, আরেকটি চোখ লাল। সারা মুখে কান্না পরবর্তী প্রশান্তি। দক্ষিণ-পশ্চিম আকাশে বৃহস্পতি আর শনি গ্রহ। হেমন্ত লুকিয়েছিল মেঘ-বৃষ্টির নিচে। নিজেকে দেখাতে এখন এইসব জাদু নিয়ে হাজির হয়েছে।
= পৃথিবীর সব কিছুই জীবন্ত, এমনকি জলবায়ুও। জীবন্ত যে তার মৃত্যু আছে। তাই জলবায়ুরও মৃত্যু আছে। সে মৃত্যু ঠেকাবে কি করে?
এভাবে বললে বলা যায়, দৃশ্যেরও মৃত্যু আছে, সত্যেরও আছে, মিথ্যেরও আছে, আছে ধর্মেরও মৃত্যু।
= আমরা যেমন হাঁপিয়ে গেলে একটু ভিন্ন জায়গায় গিয়ে ভিন্নতার স্বাদ নিয়ে আবার পরিপূর্ণ হই, তেমনি এবার জলবায়ুও অতিবর্ষণ নিয়ে ভিন্নতা পেয়ে নিজেকে আবার পূর্ণ করল, হয়ত এখনও করছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কথা যদি আসে, তা সে হাঁপিয়ে ওঠা জলবায়ু ভিন্নতা পাওয়ার জন্যই এনেছে, নিজেকে আবার শক্তিতে পূর্ণ করবে তাই।
# (২২/১০/২০২১)
ঠান্ডা ঠান্ডা কুয়াশা ঝরছে। কুয়াশাঢালা আকাশের ঠিক মাঝখানে গোল চাঁদ। নিস্তব্ধ রাত। ঘুগরো পোকা ডাকছে। গাছেরা ঠাঁয় দাঁড়িয়ে চাঁদের আলো মাখছে। কে বলে পৃথিবী বুড়ো হয়েছে? এ যেন আদিম সেই পৃথিবী, পৃথিবীর শৈশব-সময়।
# (২৩/১০/২০২১)
সত্যজিতের গল্প উপন্যাসে আনন্দ আছে, রোমাঞ্চ আছে, আছে সাংঘাতিক তথ্য, যা তোমার মধ্যে ধূমায়িত থাকা ধারণাকে ধাক্কা দিতে পারে। তুমি বৃহত্তর কোনো ইতিহাসের কারণ উদঘাটন করতে উদ্যত হতে পারো, যার উপর বর্তমান দাঁড়িয়ে; এবং ভবিষৎ গঠন সম্পর্কে আলো পেতে পারো। অর্থ্যাৎ সত্যজিতের গল্প কাহিনী তোমার মন-গাড়িকে বিক্ষিপ্ত ঘোরাঘুরি থেকে টেনে স্থিত মসৃন এক পথে তুলে দেবে।
# (২৭/১০/২০২১)
প্রিয় তমা,
তোমার জন্য আমার দুঃখবোধ আছে, আছে মমত্ববোধও। তুমি যে আমায় অবহেলা করো, তার জন্য বেদনাবোধও আছে। আমার জন্য তোমার কী বোধ আছে, সে উদ্ধার করার শক্তি এ মুহূর্তে আমার নেই। তবে তোমার প্রতি কেন আমার এতগুলি বোধ? ভাবতে গিয়ে পেয়েছি যে, তোমায় ভালবাসি। সেই ভালোবাসার নদীটি তোমার সম্মুখসীমায় এলেও তোমার নজর পেলো না। তাই বুঝি সেটি শুকিয়ে গেছে। তবু তার দাগ জ্বলজ্বলে। সেগুলোই ওই বোধগুলিকে তৈরি করছে।
# (৩০/১০/২০২১)
এই পৃথিবী থেকেই দূরকে দেখতে হবে। দূরে যাওয়া যাবে না। তাহলে পা রাখার স্থানকেই অবহেলা করা হবে। আমাদের অস্তিত্ব নড়বড়ে হয়ে যাবে।
# (০১/১১/২০২১)
মেরুজ্যোতি সূর্য আর পৃথিবীর উচ্ছাস। এক বলে যাব, আর এক বলে নেব না। সূর্য হাত বাড়ায় পৃথিবীর দিকে, পৃথিবী নিতে চায় না। দুইয়ের ইচ্ছা-অনিচ্ছার শেষ পর্যন্ত একটা রফা হয়। দুই মেরুতে নিরাপদ স্থানে তাদের মিলন হয়। সেই মিলনের দৃশ্যই মেরুজ্যোতি। এই মিলন থেকে যে ফল, না জানি জীবনের জন্য তা কত ফলুপ্রসূ।
সূর্য ঘুরিয়ে মারে পৃথিবীকে, কোথাও যেতে দেয় না। মনে তার চির অভিলাষ, পৃথিবীকে বুকের সাথে নেবে। পৃথিবীও ঘোরে, যেতে চায় না সূর্যের গণগণে আগুনে। দুজনের চির অভিলাষ দুই মুখি। সে মোটে মেটে না। তাই তো চাপা বাসনা হুতাসের মতো বেরিয়ে পড়ে কখনও কখনও। মেরুজ্যোতি তো তারই প্রকাশ।
# (০২/১১/২০২১)
ওই যে মিলন ঘটে
মেরুনদীর তটে,
মেরুজ্যোতি নাম
কী ফল তার বয়ে বেড়ায়
এই ধরা ধাম।
(সূর্যের গায়ে প্রতি ১১ কিংবা ১২ বছর পর পর গর্ত তৈরী হয়। সেই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসে তীব্র জ্যোতি। অনেকে একে সৌর ঝড় বলে; বিজ্ঞান বলে, ইলেকট্রিকালি চার্জড পার্টিকল। তা সে যাই হোক, সেই জ্যোতি কিন্তু সূর্যের আকাঙ্খা, সে আকাঙ্খা পৃথিবীর বুক স্পর্শ করার। কিন্তু পৃথিবীও কম না। কিছুতেই চায় না নিজেকে ধরা দিতে। শেষ মেষেএকটা রফা হয়। দুই মেরুতে মিলন ঘটে, বর্ণিল আলোর আকার হয়ে তা প্রকাশিত হয় জগতের চোখে)।
# (০৭/ ১০/২০২১)
তোমার অভিমান
তোমার শয়তান।
# (০৮/১১/২০২১)
চাঁদকে চাঁদের চেয়ে, ফোটন বলে বেশি মনে হচ্ছে আজ।
পাতার আড়ালে সে রয়েছে শীতের এই সন্ধ্যায়
ফোটন কৌতুক ঢোকাচ্ছে চোখ দুটায়।
( ১০/১১/২০২১)
মাকালীর সহায় নিয়ে স্বয়ংয়ের শক্তিতে জ্বলে ওঠো।অভিমান করো না।
# (১১/১১/২০২১)
নিজেকে প্রকাশ করার ইচ্ছা সবকিছুর মধ্যে বিরাজমান। এই প্রকাশটা হয় বিভিন্ন পাত্রের মাধ্যমে। তোমার পাত্রটা নিজেকে সাজানোর। নানান বিচিত্র সাজে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তুমি নিজেকে প্রকাশ করো। সৌন্দর্য যদি থাকে, ক্ষতি কী?
# (১৮/১১/২০২১)
সকালের এই যে রোদখানা ছুঁইয়ে রেখেছে শান্ত পৃথিবী, চোখের সামনে খুলে রেখেছে দৃশ্যাবলী, কে জানে এই রোদ আরও অনেক কিছু দেখাতে চায়? আমি তার পাশে ঘুরঘুর করি, ভেতরে ঢুকতে পারিনা।
= আজ উজ্জ্বলতম জোছনা। রাতেও যেন সূর্য উঠেছে। গাছপালার পাতা চিকচিক করছে। ছায়া এত জাগ্রত, কী বলব আর!
রুপোর গোলকটা যেন ফেটে পড়ছে। নীচে নেমে এসেছে।
ভাবছি, পৃথিবীতে প্রথম যেদিন জোছনা উঠেছিল,কেমন ছিল? কে দেখেছিল? পৃথিবীর মেটে বুক, পাহাড় অথবা নদী? তাই হবে। তখন মুগদ্ধতা ছিল, কিন্তু বোবা। আজ শতকোটি বছর পরে তা বাঙময় হল আমার মাঝে। একটা পূর্ণতার জন্য এত অপেক্ষা, এত নিপুণ সৃষ্টিসম্ভার!
= সবকিছু মানবীয় ও মানুষের জন্য করতে গিয়ে আমরা জগতের বিশাল সত্যকে অনুপলব্ধই রাখছি।
(১৯/১১/২০২১)
আজ চোখে মুগদ্ধ প্রসারতা। সর্বোচ্চ শৃঙ্খলা প্রকৃতিতে। ঝলমলে রোদ, না শীত, না গরম।
# (২৫/১১/২০২১)
আমরা হচ্ছি এক ঝাঁক আবেগের সমষ্টি। যখন যে আবেগ আমাদের কুলে এসে উপস্থিত হয়, আমরা তাতেই প্রকাশিত হই। আবেগেরও দুষণ আছে। যে আবেগের শেওড়া আমাদের জগত সাপেক্ষে নিরপেক্ষভাবে দেখতে বিঘ্ন তৈরী করে তাই দুষিত আবেগ। ভাল চিন্তক হতে হলে দুষিত আবেগকে দূরে রাখতে হয়।
# (৩০/১১/২০২১)
যেভাবে শীত আসে, যেভাবে বর্ষা আসে, সেভাবে আমার চোখও মুদে আসে।
# (০২/১২/২০২১)
যে পরিবারে আমার শৈশব কেটেছে, সেই পরিবারের পিতা-মাতা-সন্তানের সুন্দর শান্তিময় সহাবস্থানের একটি অভিজ্ঞতা এবং আপন শিক্ষার একটি ভিত আমার মধ্যে রয়ে গেছে। বাইরের ঝড় এসে তাকে খুবলিয়ে উড়িয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে। আমি জানিনি, এখন ভালকারে খেয়াল করে দেখেছি, আমার সকল শক্তি আপনমনে সেই ভিতটুকুকে আগলে রাখতে চেয়েছে। এই যুদ্ধে সে বারে বারে আহত হয়েছে।
= আমাদের প্রাত্যহিক ঘটনাবলী ও দৃশ্যাবলী হচ্ছে ভেতরের একটি এঁকে চলা ছবির বাইরের অংশ। সেই ছবির দর্শনই হচ্ছে জ্ঞান। ওই ছবিখানি দেখাতে যদি বহিরাবরণের ঘটনা সহজভাবে সাজানো যায়, সাহিত্যের বিচারে তাকে মন্দ বলা যায় না।
# (০৪/১২/২০২১)
সব কিছুকে ছুঁইয়ে নিজের বিজয় ও অস্তিত্ব ঘোষণা করার প্রবল ঝোঁক শিশুর শরীরে মননে থাকে। দেখলাম, এতখানি বয়স হলেও বয়স আর অভিজ্ঞতার আঘাতি প্রতিঘাতি ঘায়ে আমার শৈশবের সে ঝোঁকটি একেবারে হারায়নি। ছেঁটেছুটে তার ভেতরের হাড়কঙ্কালটা হলেও রয়ে গেছে।
#### ( কিছু কথা খুঁজে পেলাম)
=তোমার বিশ্বাসে তোমার আস্থা না থাকলে, কী করে লোকে তোমাকে বিশ্বাস করবে?
=অন্যের পারাতে আনন্দ করো, কখনো ভেবো না-তুমি পারবে না, কখনো ভেবো না-তুমি যা ভাবছ- তা সঠিক নয়, তুমি একা একটি আলাদা নক্ষত্রের মতো, তোমার আলাদা চিন্তা আছে, আলাদা জগৎ আছে, সেটাকে জাগাও, লোকে কী ভাববে তা দেখার দরকার নেই।
=সমস্ত সৃষ্টিই সত্য, তোমার সৃষ্টির মধ্যে সত্যের আচঁটুকু ফোটাতে হবে।
=হিজিবিজি দিয়েই বিরাট শিল্পকর্ম তৈরি হতে পারে, যা আগে কেউ দেখেনি।
=পারলে শান্ত থাকার চেষ্টা করো, শরীরের মাসলগুলো রিলাক্স রাখার অভ্যাস করো, তা তোমাকে বিচলিত হতে দেবে না।
=চোখ স্থির রেখে বসে থাকো, গভীরভাবে স্বাস প্রশ্বাস নাও, জগতের সত্যধারা তোমার মধ্যে ঢুকে পড়বে।
=তুমি যদি এত দেখ, তোমাকে দেখবে কে?
=মহাবিশ্বের সবকিছুই জান্তব, সকলেরই শক্তি আছে, সবই আপন আনন্দ খুঁজে বেড়াতে ব্যস্ত।
=মানুষ তার উপলব্ধি, আনন্দ, দুঃখ, স্বার্থ নিয়ে হাজার মানুষের মধ্যেও একাকী।
=শিল্পীর আবেগ যদিও থাকতে পারে, আবেগের কম্পন মোটেও নয়।
=আমি যদি বাঁচি তবে পৃথিবী বাঁচবে, আমি মরলে পৃথিবীও মরবে।
=রঙ জিনিসটা এমন একটা উপকরণ যা একই জিনিসে ভিন্নতা এনে দেয়।
=প্রকৃতি আমাদের চারপাশে রঙ ছড়িয়ে দিয়ে আমাদের দৃষ্টির আয়তন বাড়ানোর চেষ্টা করে, যাতে আমরা প্রকৃতির মূল খেলাটা ধরতে পারি।
=মানুষের মধ্যেই মহাবিশ্বের সমস্ত রহস্য ধরা পড়ে।
=মানুষ তার প্রজাতির মধ্যেই বেঁচে থাকে।
# (১০/১২/২০২১)
আজকের এই রোদ
এ পৃথিবীর প্রাণস্পন্দন,
প্রাণস্পন্দনের ক্ষেদ লুকানো ছিল
এই রোদ তারে বের করল।
# (১১/১২/২০২১)
আমার চিন্তা-পুকুরের ঘাটটা শত চিন্তার আজেবাজে শ্যাওলায় ঢেকে থাকে। ভেটরটাকে দেখতে দেয় না। একে স্থবিরতা বলে। আমি যুদ্ধ করি সেই স্থবিরতাকে ভাঙতে।
― গাছের তলা দিয়ে বিকেলের এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে বাগানের ভেতর। পাশে কোথায় প্যাঁচা ক্যাচরম্যাচর করছে। ভাত খেয়ে সিগ্রেট খেতে বাগানে এসেছিলাম, আমার নজর ওই রোদের দিকে। সারা বাগান ছায়া, শুধু ধারের দিকে ওই একটুখানি জায়গায় রোদ। গাছপালা ছাদের মতো করে রেখেছে। পাতার ফাঁক দিয়ে ছেঁড়া ছেঁড়া আকাশ দেখা যায়।
পিছন ফিরে দেখি, পুকুরধারের দিকে এক জায়গায় আমড়া, নিম আর সুপুরিগাছের মাথা এর ওর মধ্যে ঢুকে জড়াজড়ি করে আছে। তার ভেতরে একটা শুকনো সুপারির পাতা আটকে আছে। কমলা রোদ লেগেছে সেখানে। ওরই পুব পাশে নিচের দিকে কয়েকটা ছোট ছোট গাছের মাথায় ফুলে ভরা বুনো লতা জড়িয়ে বিছিয়ে ঝোপের মতো করে রেখেছে। রোদ লেগে সে জায়গাটাও খুব বাহারি।
# ( ২৭/১২/২০২১)
জীবনের রঙ্গ মেখেই সেই তাহার সঙ্গ সন্ধান করতে হবে।
# (৩১/১২/২০২১)
কীর্তিরে রেখে গেছ তুমি
তুমি নাই আর
কীর্তিহীন পড়ে থাকা
কী বা দাম তার।।
# (০৩/০১/২০২২)
এই সোনা ঝরা সকাল
ওরে আমার চোখ―
তিষ্ঠিয়ে দেখে নে,
এই জলছোঁয়া ঘাসছোঁয়া রোদ
তিষ্ঠিয়ে দেখে নে।
#(০৫/০১/২২)
দেখিল বিশ্ব,
কাননে ফুটিল তাহারই শিষ্য।।
= যে গানে সূর্য্যদেব সুর মেলান, সেই সুর কিছুটা গাইলাম, গান জানিনে।
(চীনের পারমানবিক চুল্লি গবেষণা সংক্রান্ত)
# (০৬/০১/২০২২)
আমার মনের শান্তি
হীরের চেয়েও কান্তি
ধরতে তারে
মনের ঘরে
করতে পারি কাজ
নেই তাতে লাজ।
# (০৬/০১/২০২২)
আজ আমার কোলে শিশু ঘুমালো (আমার এক বছরের ভাইপো আরুষ)। ঠিক কত বছর পর এমন হল, মনে নেই। তবে সে অনেক বছর পর হল বুঝতে পারছি। ওর ঘুমন্ত মুখখানা দেখে নিশ্চিন্ততার একটা সাগর ঠাওর করতে পারলাম। এই পৃথিবী, এই প্রকৃতি আমাদের কাছে ঠিক এমনই নিশ্চিন্ততার প্রতীক। তা এমনি করেই কোল পেতে আছে। অন্যত্র বাসস্থান গড়ার চিন্তা করি কেমন করে? মঙ্গলে বাস, অন্য গ্রহে বাস―অর্থের ব্যবসায় যদিও করো, এমন কোল পাবে কোথায়? এ আমরা এমনিই পেয়েছি, বিধাতার অশেষ দয়ায়, আমাদের কোনো প্রচেষ্টা লাগেনি, লাগেনি কোনো জটিল বিজ্ঞানের শিক্ষা, লাগেনি কোনো ভয় চালিত তাগিদ। যদি এমনি আবার কিছু পাই, সেই ভালো। কিন্তু যেখানে ছেড়েছে আমাদের, সেস্থানের মর্যাদা অন্তরে ধারণ করব, যেমন পুকুরের মাছ ধারণ করে জলের মর্যাদা।
# (০৮/০১/২০২২)
সত্যকে যদি না দেখতে পারি, সাহিত্য করে লাভ কী? যারা চাঁদের আলো দেখেনি, বিদ্যুতের আলো বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। ক্ষতি চাঁদের আলোর নয়, ক্ষতি শিক্ষার। যখন বিদ্যুত-বিবর্জিত নদীকূলে জোছনালোক দেখবে, সেই কুশিক্ষা হাজার কুশিক্ষার জন্ম দেবে।
# (১০/০১/ ২০২২)
যেখানে শিশুর আনন্দ হয়, সেখানে ঈশ্বর নেমে আসেন। সৃষ্টির মূলে যে আনন্দ-গতি, শিশুর উছলতার মধ্যে তার কিছুটা ধরা পড়ে।
No comments:
Post a Comment