Friday, November 26, 2021

নদী-খাল বিক্রি করল কে

আমাদের বাড়ির পাশে বড় বিল, সেই বিলের মাঝ দিয়ে কাঁকশিয়ালী নদী আর পায়ে হাঁটা পথ পাশাপাশি চলে গেছে। সেই পথ ও নদীর এক জায়গায় কতকগুলো কেওড়াগাছ নিয়ে মদিনার দরগা। মদিনার দরগায় আমার এক চিলতে শৈশব পড়ে আছে। সেই স্মৃতি দেখতে আজ প্রায় তেত্রিশ বছর পর আবার গিয়েছিলাম। ছোটবেলায় দেখেছি, পথটি বড় নির্জন ছিল। কাঁচা পথ, পায়ে হাঁটার মতো সরু রেখা ছিল ভেড়িবাঁধের ওপর, কত উঁচু ছিল। পূব দিকে গোবিন্দকাটি গ্রাম, পশ্চিমদিকে কালীগঞ্জ। এই দুই এলাকার মধ্যে যাতায়াত করত দু একজন। শীতের সকালে ধোঁয়া ধোঁয়া রোদের ওম ঝরত। পথের একপাশে বাবলা গাছের সারি, আরেক পাশে তো কাঁকশিয়ালীর কুলকুল করে বয়ে চলা। গাঙ শালিকের কিচিরমিচির ভেসে আসত, সে এক মধুর নির্জনতা। আজ দেখলাম, সেই ভেঁড়ি বেশ নীচু হয়ে গেছে। এত নীচু যে, নদীতে একটু জলের তোড় এলেই গ্রাম, বিল তলিয়ে যাবে। নির্জনতাটুকু মাঝে মাঝে নষ্ট হয়েছে, মানুষের কর্মকাণ্ড ঢুকে পড়ার দরুন। তবুও সেই শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ এখনও অনেকটা আছে। মদিনার দরগার ওখানে একটা পাকা মন্দির মতো ছিল, তা এখনও আছে, তবে সেই কেওড়াগাছগুলো নেই।



যা দেখলাম, তাই অনেক। শৈশবের স্মৃতি আজ নিতে গেলাম, আজকের দিনটাও স্মৃতি হয়ে যাবে।






ভারি আশ্চর্য হলাম এই দেখে যে, নদীর পাড়, খালের পাড় দখল করে নিয়েছে মানুষ! নদী, খাল তার তীরকে যে অনুসঙ্গ দান করে, মাঝখানে মানুষ এসে সে দানখানিকে নিতেও দিচ্ছে না, দিতেও দিচ্ছে না। প্রকৃতির নিরিখে এ ঘোরতর অন্যায় ও অপরাধ। যেখানে সাপের বাড়ি, পাখির বাড়ি সেখানে মানুষ ঢুকে পড়েছে। আর সবকে তাড়িয়ে মানুষ বাড়ি বানিয়েছে। আকাশ-বাতাসের মতো নদী ও খাল মানুষের সম্পদ নয়। তা প্রকৃতির, রাষ্ট্র সেগুলোকে হেফাজতে নেয়। মানুষের প্রয়োজন কখনও ফুরাবে না। সেই প্রয়োজনকে হাতিয়ার করে রাষ্ট্রের বর্তমান পরিচালন শক্তি যদি সেগুলোকে যথেচ্ছ বিতরণ করে, আগামী সময় তার তিলে তিলে প্রতিশোধ নেবে। জলের প্রবাহ থামিয়ে, জল দুষিয়ে, জৈব-বৈচিত্র কমিয়ে মানুষকে রুগ্ন, ভগ্ন করে তুলবেই। নদীর পাড়, খালের পাড়, পাড়ে পড়ে থাকা বাবলার গোড়ায় যে নির্জনতা, যে শান্তি, পাখির কলরবের মধ্যে যে শান্তি, তা নষ্ট করা মানেই হল আমাদের শান্তিকে নষ্ট করা। নদী খালের বুকে বাঁধ পড়েছে, প্রবাহ নেই, নদী-খাল বুজে যাচ্ছে, গ্রাম ধোয়া যে আবর্জনা জলস্রোত টেনে নিয়ে যেত, সেগুলো এখন গ্রামেই থাকছে। গ্রামের মাটি হয়ে যাচ্ছে বিষাক্ত। জল না সরার দরুণ জলাবদ্ধতা তৈরী হচ্ছে, ফসল মার খাচ্ছে। দেখলাম বিশাল আয়োজনে ইটের ভাঁটা তৈরী হয়েছে। যতটুকু ডিসিআর কেটেছে, কার্যক্রম ততটুকুতে আটকে নেই। ছড়িয়ে পড়েছে আরও বেশি জায়গায়।




যেটুকু ফাঁকা, যেটুকু নির্জনতা এখনও রয়েছে, তা থাকুক। আর যেন নষ্ট না হয়। নদীর পাড়, খালের পাড়, যেসব জায়গায় চর জাগছে, অন্তত বিশ বছরের মধ্যে সেসব স্থানে ডিসিআর দেওয়া বন্ধ থাকুক। ডিসিআর দিলে কেউ যেন আবাস বা বাড়ি বানাতে না পারে সে শর্ত দেওয়া হোক, শুধু ফসল ফলানোর জন্য ডিসিআর দেওয়া যেতে পারে। অবৈধ দখল যদি কেউ করে থাকে, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে তাদের তুলে দেওয়া হোক।




মানুষের পদচারণা যদি অন্য জীবের পদচারণাকে ব্যাহত করে, মানুষের জন্য তা সুখের হলেও প্রকৃতির জন্য সুখের নয়। প্রকৃতি সকলের জন্য সহাবস্থান তৈরী করেছে। মানুষ যদি নিজের প্রয়োজনে সেই সহাবস্থান অসহনীয় করে তোলে, তাতে প্রকৃতি অখুশি হবে। অখুশি প্রকৃতি আমাদেরকে খুশি রাখবে না। 

Wednesday, November 24, 2021

টুকরো কবিতা

চারদিকে মিথ্যে শিক্ষা

অমূলক শ্রেষ্ঠত্ব যাচাইয়ে

অন্যকে পীড়ন,

আড়াই টাকার অডিওতে খাচ্ছে

হাজার বছরের মিলন।।

Sunday, October 31, 2021

তোর তরে

 বিশ্বশক্তি তুমিই মাগো

তোমার থানে ঝরে

সেই শক্তি রূপ হয়ে

জগতময় ধরে।

সেই যে আমার কাটানো দিন

সেই যে বিকেল হেমন্ত দিন

শান্ত পুকুর পাড়ে তাহার

শুকনো পাতায় রোদের বাহার

পাখি ডাকে মাঠের গাছে

নিরিবিলি পথের কাছে

সবই তোর শক্তির আলো

স্মরণ করে লাগে ভালো।

সৃষ্টিরূপে যত প্রকাশ

এই যে আকাশ এই যে বাতাস

সবই তোর শক্তির রূপ

অপরূপ অপরূপ

দেখে যত মন ভরে

জানব তা তোর তরে।

(৩১/১০/২০২১; সাতক্ষীরা)

Wednesday, October 20, 2021

রাখোনি তাদের কোনো কামে

তোমাকে বিকিয়ে তোমায় রক্ষা

এ কুশিক্ষা দিয়েছে যারা

তাদের জিদ রক্ষা করছে যারা তোমার নামে

জানি তুমি রাখনি তাদের কোনো কামে।

হে মহান, বহু বিচিত্র মাঝে বসে

সবারে দিয়েছ যে মান

তাই ভেঙে করছে যারা খান খান তোমার নামে

জানি তুমি রাখনি তাদের কোনো কামে।

(১৯/১০/২০২১; দক্ষিনশ্রীপুর)

Thursday, September 30, 2021

গুচ্ছ কবিতা

 ১,

এ খেলা ভাঙবে নতুন খেলার জন্য

এর প্রতিটি বাহার তাই

দেখে হও ধন্য।


২.

তোমার জন্য রব না থেমে,

মহাবিশ্বের যে প্রেম

বদ্ধ হব সেই প্রেমে,

যদি কখনো তোমার মনে

আমার স্মৃতি আসে নেমে

ভেবো আমি খুশি

যত দুঃখ দিয়েছ আমায়

সকল দুঃখে আমি খুশি

মহাখুশি।

(০৮/১১/২০২১; সাতক্ষীরা)



Monday, August 30, 2021

আমার বৃহস্পতি

 একটাই বৃহস্পতি পুব আকাশে

কোনো নিঃসঙ্গ নারীর ডাগর চোখের মতো

আমার দিকে তাকিয়ে থাকে,

এই শহরের রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে

কখনও আমার চোখাচোখি হয় তার সাথে,

চোখ আটকে যায় দু এক সময়

তখন কী যে এক অনুভূতি ছেয়ে ফেলে চারিধার

ক্ষমতা নেই তা বোঝাবার।


কোনো এক অজ্ঞাত মা

যে তার সন্তানকে রেখে চলে গেছে,

বহুদিন পর দেখে চিনতে পারেনা,

তবু অনু-পরমাণুর বাঁধনে যে আনচান ওঠে মায়ের চোখে,

বৃহস্পতিকে দেখে আমার তেমন হয়,

জানিনা একে কী কয়।


তার আলোক পেখমে

মনে হয় আপন কেউ আমার আছে আসে,

বনের মাথায় মাঝ রাতে যেমন জাগে চাঁদ,

তেমন জাগা চোখে আমায় দেখে,

দুঃখ না সুখ পায় তা শুধু সে-ই জানে।


দূর দুরন্ত এভাবে কাছে আসে

কাছে এসে ঘুর ঘুর করে দূর

দূর আমার পরাজয় নয়

দূর আমার, আমারই অঙ্গন

আমার বুকের কম্পন।


(৩০/০৮/২০২১; সাতক্ষীরা)


Friday, July 9, 2021

এক মায়ের সন্তান

 বৃষ্টি আসে         ঝমঝমিয়ে

মনটা আমার      দেয় ভিজিয়ে

প্রাণটা আমার    দেয় ভরিয়ে

চিত্ত আমার        দেয় রসিয়ে

চিন্তা আমার      দেয় ঝরিয়ে

ব্যর্থ আমার       দেয় সরিয়ে


আমিও একা, সেও একা

আমি যার, সেও তার

আমরা দুজন সমানে সমান

এক মায়ের সন্তান।


(১০ জুলাই, ২০২১, দক্ষিনশ্রীপুর, সকাল)





Wednesday, July 7, 2021

বৃষ্টিছায়া

 নেশাধরা নিশার মতো বৃষ্টিছায়া

জল টুপটুপ পাতার দলে

স্বপ্নপুরের দূর আঁধারের উর্বশির

ভেজা চুলের গন্ধ-কথা বলে,

মমতা-মধুর স্বপ্ন জগৎ তারে ঘিরে

চুপটি করে এসে দাঁড়ায়

এই জগতের পরে

দেখে জনম ভরে

বর্ষাবহুল নির্ঝরে।

(০৭/০৭/২০২১)

Saturday, June 19, 2021

আমার সূর্য্য

এই যে মেঘ-
এও তোমার সৃষ্টি, তোমারই শিষ্য
খেলছ আড়াল আজ
হয়েছ অদৃশ্য
হে সূর্য্য ।

যখন করি প্রণাম
সেই ক্ষণ আমার সার্থক
পুরো জন্মে,
সারা জন্ম সার্থক 
শুধু একটি ক্ষণে
যখন তোমায় ভাবি মনে,
না চাইতেই পাই সৌর্য
হে সূর্য।
(১৯/০৬/২০২১; দক্ষিণশ্রীপুর)

মেঘের দেশের জল














 বৃষ্টি শব্দে ডুবেছে সব

এই সকাল, সকল রব।


ভেজা উঠোন ভেজা পাতা

একটা পাখি ডাকে একা

যায় না দেখা।


ছায়া জমে পাতার তলে

দিন দুপুরে ভিজবে বলে

লিচুতলা ফাঁকা।


ঘাসের পাশে গড়ায় জল

কচুর পাতায় জলের দল

নেই কেউ কোনখানে,

বৃষ্টি সকলখানে

সব যে তারই আঁকা

মেঘের দেশের জল যে ভাই

আমায় দিল দেখা

সেকি যেমন-তেমন দেখা!

(১৯/০৬/২০২১; দক্ষিণশ্রীপুর)