Thursday, November 7, 2019

এই কার্তিক

শীতমুখো বিকেল, ক্রমেই ঢুকে যাবে শীতের ভেতর,

পথের ধারে তার এখনও খুঁজি
সেই যে ঝুম স্তব্ধ পুকুর
চারদিকে হাতধরাধরি করে গাছেরা দেখে–
স্বচ্ছ জলের তলে
ঝরা পাতার পাশে ঝিনুকের শুয়ে থাকা

পাশের দীঘি
ফুলের গন্ধের মতো ঠান্ডা ছড়ায়
ডুমুর সন্ধ্যা নেমে আসে
শোল মাছের পিঠের মতো ছায়া
শিশির শরীরে পাতায় এসে বসে
তারপর চুপ থাকে ঘুমের আবেশে

দূর কোন বন থেকে তখন
শালিকের কিচির-মিচির
ক্ষীণ থেকে ক্ষিণতর,
বুকের ভেতর উদাস জাগায়,

এই কার্তিক কেন জানি ভাবায়
সেই পথখানি তার মিশেছে আমার সাথে
আমার সাথেই হারায়।

(০৭/১১/২০১৯; দক্ষিনশ্রীপুর)

Sunday, October 27, 2019

সে এক ছিল

হারিয়ে যাই বলে হারিয়ে ফেলি সব
যেটুকু হারাবার না
সেটুকু নিয়েও হারিয়ে যাই
সেই ভালো,
যদি তোমার চোখে নিজেকে দেখি কখনও...

এক গ্লাস চৈত্রের মাঠ
নির্জনে চিতিয়ে থাকে আকাশের তলে,
চুকচুক শব্দে কলাই ফাটে
রোদ পাতার ওমে,
একপাশে তার প্রজাপতি ওড়ার ওপর
এলিয়ে থাকে বাঁশঝাড়,
সেখানে শীতল ছায়ায় জিরোয়
ধুলোমাখা কৃষ্ণ কায়ার মোসলেম,
আর কেউ নেই, শুধু দূরাগত শব্দ
কলারপাতায় খসখসের মত নিরিবিলি করে চারিধার,

সেসবের মত যদি নিজেকে দেখি কখনও তোমার চোখে

যেন ভাবি, সে এক ছিল
পাশাপাশি বসেছিল আমার পাশে
ঝর্ণাধারায় দাপিয়েছিল দুখানি পা
শিলার পরে বসে,
তামাটে শরীর আমার হাতুড়ি ধরার গন্ধ বিলিয়েছিল
কালোপেড়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছিয়েছিল সে
শিশিরের মতো হেসে।

Saturday, July 6, 2019

বৃষ্টি পুকুর

বৃষ্টি পুকুর একলা দুপুরে
ভেজে একা নাই কেহ রে
পাড়ের নীচে নিরজনে
ছায়া ভেজে আপন মনে।
সজনে গাছের রোগা গুড়ি
ভিজতে যে তার নেই জুড়ি
ঘাসগুলো সব মাথা তুলে
ভিজে ভিজে যাচ্ছে বলে
বৃষ্টি সাথে কত কথা
শুনছে শুধু কলার পাতা।

কলার পাতা ভিজে মরে
তাই দেখে ব্যাঙ দুচোখ ভরে
ব্যাঙটা আছে জলের ধারে
বৃষ্টি স্রোতের পথের পারে।

মাঝপুকুরে দুটো হাঁস
ঘাড় গুঁজে নিচ্ছে স্বাস
অঝর ধারায় ভিজছে এসে
চুপটি করে ভেসে ভেসে।

ওই যে পাড়ে নিরজনের
ছায়া আসে বাঁশবনের
ওইখানে ডাল আঁশফলের
ছুঁল শরীর পুকুর জলের।

(০৬/০৭/২০১৯ দক্ষিনশ্রীপুর)

Friday, July 5, 2019

স্বর্গের সই

ঝুপটুপ ঝুপটুপ বৃষ্টির টোপ
টলমল ঝলমল বুনোঘাস ঝোপ
চালে-ডালে খালে-বিলে সাঁ সাঁ সাঁ
চৈ চৈ হৈ চৈ লা লা লা।
শুকনো রুগনো আষাঢ়ের দিন
হলো শেষ বাজে বেশ বৃষ্টির বিণ
চুপচুপ টুপটুপ কে আসে ওই
ছিল কোথা এল হেথা স্বর্গের সই।

(০৫/০৭/২০১৯ দক্ষিনশ্রীপুর)

Tuesday, June 4, 2019

একটি প্রার্থনা

বৃষ্টি এল বেড়াতে
আষাঢ় এল তাতে
এমন করে বৃষ্টি যেন
আসে আগামীতে।

ঠান্ডা স্বচ্ছ নির্মল দানা
ঝরছে যেমন করে
এমন রূপ বৃষ্টির যেন
থাকে যুগ ধরে।

দূষণ কালো মিথ্যে মেঘ
ওড়ে না যেন শুন্যে
এই আকাশ খোলা থাকুক
সত্যি মেঘের জন্যে।

(০৪/০৬/২০১৯; দক্ষিনশ্রীপুর)

Wednesday, May 22, 2019

মায়ের জন্য

মায়ের জন্য মনটা আমার কাঁদে জানো কখন
পুবের মাঠে গাছের মাথায় বাঁধে ঘুড়ি যখন
এক মাথায় সুতো ধরে খাঁ খাঁ রোদে ছুটি
আরেক মাথায় ঘুড়ি যখন মাটিতে লুটোপুটি
সারা বিশ্ব ঘুড়ি হয়ে ভেংচি কাটে যখন
মায়ের আঁচল মনে পড়ে খুব যে আমার তখন।

জানো, আর একটা আছে, বলছি শোনো এবার
ডাব্বা পেলে অঙ্কে সবাই চোখ রাঙাল যেবার
স্কুল থেকে ফিরছি একা মনে ভিষণ দুখ
পড়ছে মনে অবিরত মায়ের সোনা মুখ।

আরো আছে, গোপন কথা, না শুনলে আড়ি
মা যেবার আমায় ছেড়ে গেল মামার বাড়ি
পড়তে বসে বাইরে থেকে ছুটে যেতাম ঘরে
লুকিয়ে কেঁদে মায়ের কষ্ট মিটত তবে পরে।


(২২/০৫/২০১৯; সাতক্ষীরা)

Saturday, April 20, 2019

সত্যজিতের গান

শিল্পীর জিত সত্যজিৎ
বিপুলে ব্যাপকে আনল জিত,
নতুনে চমকে হানল হানা
দুললো ফুললো বিশ্বখানা
গেয়ে গেয়ে গেল জয়ের গীত।।

নিজের নিজেদের গল্প যত
ধরল গড়লো পুঁজি তত
ত্যাগল ছাড়লো অন্যপথ
বিভবে বিচিতে তাই সম্পদ
শিল্পে কল্পে অন্ধ বিভোর
গড়ল গড়ালো শিল্পের ভীত।।

(২০/০৪/২০১৯)

Friday, March 1, 2019

ছড়া-কবিতা-গান


(১)
যারে আমি "আমি"বলি
সেই শক্তিটুকু যাবে নিভে
এই দেহে, যেমন করে
 মোমবাতির আলো নেভে।

 চারধারে থাকবে এমন
 হাজার আলো, দেখো তুমি
তার মাঝে আমায় পাবে
খুঁজো তুমি ।

যে মহাশক্তি ধরেছে ভুবনে
তারই এক ফোঁটা "আমি" হয়ে
দিয়েছিল ধরা, বেসেছিল ভাল,
গেয়েছিল গান, মেখেছিল আলো,
নিয়েছিল শোক অপমান কঠিন জীবনভার
জেনো সবই খন্ড খন্ড আনন্দ তার।

(২২/০২/২০১৯)

(২)  গান
দূর থেকে আসে তোলপাড়
নীরবে আছড়ে পড়ে
ভাঙে দেহমনের পাড়।

তারই টানে সূর্য পানে
পৃথিবী ফেরায় মুখ
সেই টানে দেহ মনে
জেগে ওঠে দুঃখ সুখ।

পূজা তার হয় সকলখানে
সকল মনে জাগে সাড়।।

তারই পূজায় চৈত্র আকাশ
চাঁদের টিপ কপালে দিলো
দখিন হওয়ায় নারকেল পাতায়
চিকচিক করে চাঁদের আলো।
তার পূজাতে পাতার ছায়া
মাথায় নিয়ে জোসনা মায়া
বুকের ভেতর ঢেকে রাখে
ব্যাকুল পাখির আকুল গাওয়া।

তারই পূজায় ঝরা পাতার
মর্মবেদন ওঠে ভেসে
উদাস হাওয়ায় ছায়াপথে
গায় জয়গান কেঁদে কেঁদে।

তারই পূজায় নতুন রঙে
সাজল আকাশ নতুন করে
অবুঝ বোধ উথলে উঠে
বসল জেঁকে ভাষার বাইরে।

জীবন ফোঁটায় ধরল কী এক
বোঝাব তা কেমন করে
ভাষায় পাইনে কেবল উচ্ছাস
উচ্ছসিয়া আবার অসাড়।

দূর থেকে আসে তোলপাড়
নীরবে আছড়ে পড়ে
ভাঙে দেহমনের পাড়।

(২২/০৩/২০১৯: দক্ষিনশ্রীপুর)

(৩)

চৈত্রের রাত    চাঁদের ফাঁদ
পাতার ফাঁকে,
ঝিরিঝিরি হাওয়া    মনপ্রাণে বওয়া
কোকিল ডাকে।

চিকচিক আলো    দেখায় ভালো
নারকেল পাতায়,
ছায়ার বনটা     জোছনার ঘোমটা
টেনেছে মাথায়।

যেটান সুখে     সূর্য মুখে
পৃথিবীর মুখ
সেই যে টানে     দোলা আনে
হৃদয় উন্মুখ।

আজ চৈত্রে  কোন মৈত্রে
কিসের তোড়ে
জীবনপাত্র   উছলি মাত্র
উথলে পড়ে।
(২২/০৩/২০১৯: দক্ষিনশ্রীপুর)

(৪)

কুন্ঠিত হয়ে ঢেকে রাখি
নিজের আলো যত
লোভ করে ভালো সেজে
নিজেকে হারাই তত।
সংকোচে অবগুণ্ঠিত
চঞ্চল ব্যস্ত ত্রস্ত
নিজের আলো ছড়ালাম না
জীবন গড়িয়ে অস্ত।
লোভের শিখায় কামনা জ্বেলে
অন্তর্মুখী হলাম শুধু
মন তলাতে না পেরে
পেলাম ছাই মরু ধুধু।

(২৬/০৩/২০১৯: দক্ষিনশ্রীপুর)


Saturday, February 23, 2019

কবিতা : প্রাণদেবতা

(১)
ভেবেছি একলা বিদায়ের বেলা
কী দেখেছি আর কী আছে বাকি
এই মনে হয় সবকিছু আছে, এই মনে হয় ফাঁকি।

কোথায় সে যাবে এই পৃথিবী কেমন হবে শেষ দিন
কত শত পথ বানাবে মানুষ কত পথ হবে লীন
এক নেভাতেই হবে কি শেষ আমার প্রবল বাসনা
তোমাদের সাথে দেবনা কি পাড়ি সেই সুদূরের নিশানা
চাপা পড়ে কি থাকব আমি  সময়েরই মাঝপথে
অতল ধুলায় হারাব কি আমি রব না কি মোটে সাথে।

এসব কথা জাগে মনে আজ ক্ষণে ক্ষণে সারাদিন
এক জীবনেই হবে কি শেষ রইবে পড়ে আস্ত দিন
মহাকালেরই একটি ফোঁটা সেই কি সময় আমার
কত যে দেখার থাকবে বাকি কত রূপ সেই তাহার।

যত দেখি এই আলো আর আকাশ রাতের জোছনা
আমার বাড়ির সম্মুখ পথ আমার ঘরের বিছানা
মন বলে যেন না হারায় সব থাকে যেন চোখে লেগে
এই যে গ্রাম এই কলরব যদি না আর উঠি জেগে।

ফুরাতে বসা সময়ে বসে ভাবি কেন সব ফাঁকি
তখনই কেএক উঁকি দিয়ে  বলে মেল দেখি মনআঁখি
দেখতে পাবি মহাপ্রাণ এক চিরকাল বহমান
ফুটিয়ে তোরে গায়ের পরে হয়েছে আয়ুষ্মান
তোরে দিয়ে সে নিচ্ছে শুষে জীবনের আনন্দ
তোর যা আছে হচ্ছে তার সকলই হিসাব মতো
আমি আমি করে পাসনে দুঃখ মহাআমি সে সেই
হারাসনে তুই ফুটিস আবার নতুনে তার গায়েতেই
প্রকৃতি তারে নিজেকে জানাতে দিয়েছে বাঁচার পথ
চড়ে চড়ে সে বেড়ায় অশেষ আনন্দেরই রথ
তোর যা আছে নিয়ে সব সে চলেছে চির অম্লান
আনন্দ নে দুঃখে সুখে যপ তোর সে দেবতা প্রাণ

(২৩/০২/২০১৯-দক্ষিনশ্রীপুর)

(২)
 (গান)
দান তার খুঁজে নিতে হয়
ছড়িয়ে রেখেছে বিশ্বময়।

দানের মাঝে আছে রাখা
তার হাতের পরশ ঢাকা
আড়ালে আমার বসে থেকে
পথে পথে যাচ্ছে হেঁকে
দানের কাছে ডেকে নিতে
দেখা তার তাতেই দিতে
সে যে দয়াময়।

(২৪/০২/২০১৯/ সাতক্ষীরা)