(ভূমিকা : লক্ষ্য করেছি- বাইরের কিছুর প্রভাব আমার শরীর-মনে কাজ করে। বিভিন্ন ঋতু যেমন প্রকৃতিকে বিভিন্ন ভাবে সাজায় -তেমনি সেই প্রভাব আমাকে সাজায়। বছরের সারা সময় তাই আমি একই রকম থাকতে পারিনা। এ কোনো আকর্ষণ হবে -যা আমার শরীরের প্রতিটি পরমাণুতে ধরে। সেই আকর্ষণে নিজেকে বলি দিতে হয় আমায়। আমি যে কাজ ভাবি- তা করতে পারিনা, আমাকে অন্য চিন্তা ডাকে। একটা পার্থিব আর অপার্থিবের সংঘাত রয়ে গেছে, ভাবি পৃথিবীর সব কিছুই পৃথিবীর না, কিছুটা অপার্থিবও আছে (পার্থিব বলতে আমি 'আদি পৃথিবীকে' বুঝিয়েছি, অপার্থিব বলতে 'পৃথিবীর বাইরে' থেকে আসা কোনো কিছুকে বুঝিয়েছি- সে অর্থে 'রোদ বা গ্রাভিটেশনাল ওয়েব' ও এখানে অপার্থিব হতে পারে) । তাই বোঝা যায়- আমি নিজেও কিছুটা পার্থিব আর কিছুটা অপার্থিব বস্তু দিয়ে তৈরি। তাই সেই সংঘাত আমার মধ্যেও আছে। পৃথিবীতে কিছু কিছু শোভা ফোটে- যাতে অপার্থিব এসে হাজির হয়, বলা যায় অপার্থিব কিছু সেই শোভা হয়ে অস্তিত্ব গাঁড়ে, যেমন মোমবাতি জ্বালালে যে আলো পাওয়া যায়- তা মোমের বস্তুর নয়, তা আলাদা- তেমনি। কিন্তু সেই আলো জ্বালানোর জন্য মোমের দরকার। পৃথিবী তাঁর স্বভাব অনুযায়ী সেই শোভাকে নিজের মনে করে, আর এখানেই দ্বন্দ্বের সৃষ্টি। কেননা দুটোই প্রখর অস্তিত্ববাদী সত্তা। যদি ভাবি - অপার্থিব কোনো কিছুতে আমার প্রয়োজন কিসে? আমার কাছে প্রয়োজন নেই ঠিকই, কিন্তু কোনো কোনো সময় সেই অপার্থিবই তাঁর প্রয়োজন জানান দেয়। এটিই ব্যক্ত করার জন্য ঋতুচক্রের গভীরে কবিতাটা লিখলাম ।)
ঋতুচক্রের গভীরে
ভোরটাকে দেখতে দেখতে
দুপুর হয়ে যায়-
তবু খুঁজি সেই শিশিরের দানা-
সবুজের আরো সবুজ রঙ,
না পেয়ে বলি- এ কেমন সঙ!
সন্ধ্যা এসে কোন ফাঁকে চুপি হাসে
আমি অপেক্ষায় থাকি পরের ভোরের।
রাতজাগা পাখি আমি নই,
ঘুমিয়ে স্বপ্নদেখি ভোরের
ঘুম ভাঙলে মনের শরীরে পরশ বুলিয়ে বুঝতে পারি
ভোর চলে গেছে দূরে- নেশা রেখে,
শরীরও তখন দুপুর থেকে সন্ধ্যার দিকে,
হঠাৎ বুঝতে পারি-বাইরের কোন আলোক-চুম্বক
গোপনে বলে যায় ' এখন সময় বিকেলের,'
আমি বিকেল থেকে মুখ ফিরিয়ে
ভোর সাজাতে থাকি, দেখি-
সমস্ত বিকেল আমায় নিয়ে খেলায় মেতেছে।
আমি আচ্ছন্ন হয়ে বলি-
এ বিকেল আমার প্রয়োজন না
আমি সরিয়ে ফেলব একে, পারিনা,
শরীরে সন্ধ্যা এলে সেই আলোক-চুম্বক বলে-
'তোমায় দিয়ে প্রয়োজন মেটানো হয়
তোমার প্রয়োজন বড় কিছু নয়।'
(২০.১০.২০১৭ দক্ষিনশ্রীপুর)
No comments:
Post a Comment