এই বাংলার ঘাসের ডগা
আনন্দেতে থাকত
মেঠো হওয়ায় ফুরফুরিয়ে
দুলে দুলে উঠত,
পুকুরপাড়ে সেই ডগাটি
দেখার মতো ফুল তো।
হঠাৎ আজ মাঠের মাঝে
কেমন তরো গাছপালা
তারই মাঝে ওই দেখা যায়
পাইনগাছের চোখজ্বালা
আমেরিকার গাছটা সে
চোখে লোভ অঙ্কিত
তারই আঁচে ঘাসের ডগা
ভীষণ ভয়ে শঙ্কিত।
ভুতোম বেড়ের পুকুরে
ঝিমধরা এক দুপুরে
পাতার পাশে সূর্য এসে
হাসল হঠাৎ ফিক করে।
সেই হাসিটা তিল হয়ে
জলের গায়ে গেল রয়ে
সন্ধ্যেবেলা তালগাছেরা
খোঁজে তারে খুব করে।
(১৪/০৯/২০২৩; সাতক্ষীরা)
আবেগ আছে, রাগ আছে
ভাবো, সবার আগে কাজ আছে।
আবেগে যদি খায় "কাজ"
তবে মাটি হবে "আজ" ।
পোড়াও আবেগ মনের ভিতর, তিষ্ঠ ক্ষণকাল
তবেই তুমি কাজের কাজী দেখবে মহাকাল।
(২১/০৮/২০২৩; সাতক্ষীরা )
হলদে দুপুর অলস খুব
ঘুমের দেশে দিচ্ছে ডুব
বুকে তার হলুদ পাতা
মেঠো ফুলের কথকতা
চোখে তার উদাস হাওয়া
কুঁচ ফলের আসর পাওয়া।
হলদে দুপুর ফিরে ফিরে
নামছে আমার চোখের তীরে
কলার পাতায় বসছে ধীরে।
(১৪/০১/২০২৩)
ঝরঝর ঝরে, আকাশ মেঘলা
বর্ষার আমেজ এসেও আসে না
কদম ফুল ফুটেও ফোটে না
গন্ধ তার লেগেও লাগে না
বনে ছায়া নেমেও নামে না
তবে কি চলে যাবে দূরে
অন্য কোথাও পড়বে ঘুরে
আমিও যাব, রব না ছেড়ে।
(২৪/০৬/২০২৩; সাতক্ষীরা)
আমার ভাঙা ঘর
আছে শুধু খুঁটি
তারে নিয়ে থাকি।
বাইরে মেলেছি শিকড়
সেখানে জল পাই
তাই শুধু খাই।
এর মধ্যে উড়ে এল সেই চাল
শিকড় চায় কিনা জানিনা
আমার মনে দোটানা।
বাইরে শিকড়, জল-কেলি
কী বলি, কী যে বলি।
পলাশ ফাটা রোদ্দুর
বুকের ভেতর বহুদূর
ছায়া ঘেরা গ্রাম
সে বন্ধুর ধাম।
হলুদ পাতার বন
বাসন্তী মন
আকাশ নামা আলো
সাদা সাদা ভালো।
লেবুফুল পড়ছে ঝরে
ধূলির পরে
শীতের আমেজ রইল পড়ে
সকাল ধরে।
কুয়াশা ভরা আকাশটা
শান্ত চোখে
সূর্য খোঁজে বুঝি সে বা
অচিন লোকে।
দিনের আলোয় জমা হয়
পাখির গান
পাতার জীবন, পাতার মরণ
কুঁড়ির ঘ্রাণ।
পলাশ ডালে ফুল ফোঁটে
লালে লাল
হচ্ছে এসব যার ডাকে
বসন্ত কাল।
(১৮/০২/২০২৩; দক্ষিনশ্রীপুর)
বৃহস্পতি, আলোর ডুম
পাতার ফাঁকে উঁকি মারে
যখন আমার ভাঙে ঘুম।
আঁধার ছায়ার বনতলে
যে বুড়োটা হেঁটে চলে
হাতে থাকে আলোর বাতি,
তার মত আকাশ পথে
হেঁটে চলে বৃহস্পতি।
বৃহস্পতি আমায় টানে
কেউ কি আছে ওইখানে?
হয়ত সে চিরঘুমে
ঘুম ভাঙার আশায়,
স্বপনে থেকে থেকে
ডেকে যায় আমায়।
(০৯/০১/২০২৩)
(সূর্য স্ফীত হতে হতে পৃথিবীর কক্ষপথ পর্যন্ত চলে আসবে। পৃথিবীকে টেনে নেবে বুকে। সকল শক্তি শেষ করে একসময় সূর্য শ্বেত বামনে পরিণত হবে। সে অবস্থাটাই মৃত সূর্যের লাশ, তা ভেসে বেড়াবে মহাকাশে। শেষ দিনে সেই লাশের গায়ে ঘুমাবে আমাদের এই পৃথিবীও)
তোমায় আমায় চলছে খেলা
নিচ্ছ চিনে, নিচ্ছি চিনে
আমায় ধরার ইচছা তোমার
পূরণ হবে শেষের দিনে।
এই যে জ্বলা― আগুন ধরা
দেহ তোমার শীতল হবে
তোমার সাদা লাশের পরে
দেহ আমার থিত হবে।
শেষের আভাস আসার আগে
শেষ যে হব হেসে-কেঁদে
তোমার কিনার আসবে ছুটে
নিতে আমায় ধরে বেঁধে।
আমার বুকে ফুটল প্রাণ
দিয়েছ তারে যত দান
কত যুগের কথকথা
কত হাসি কত ব্যথা
জোছনা ওঠার প্রথম রাত
ঘর গড়ার স্বপ্ন সাধ
প্রথম দিনের বর্ষাধ্বনি
প্রথম প্রাণের উদযাপনি
মধু ছায়ার রাতগুলি
মায়া ভরা ক্ষণ গুলি
সব নিয়ে স্তব্ধ শ্বাসে
তোমার বুকে চিরবাসে
থাকব তোমার সঙ্গে
মিলিয়ে অঙ্গ অঙ্গে।
তুমি আমি রইব পড়ে
মহাকালের পথের ধারে
সেদিন কে নেবে গো টেনে
নাইবা জানি তারে।
(০৭/০১/২০২৩; দক্ষিনশ্রীপুর)
